ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হস্তান্তর : জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে

স্টাফ রিপোর্টার : নির্যাতনে নয়, নওগাঁ ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে মনসিক চাপ থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তকারী টিমের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। এর আগে রবিবার বিকেলে জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন ডা. কফিলন উদ্দিন।
ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, আমরা ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি। আমারা চূড়ান্ত মতামতে পেয়েছি জেনমিনের মৃত্যুর কারণ ‘শক’। এই শকের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি বলেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের যে কারণ হয়েছে সেটি হচ্ছে, মস্তিষ্কে ভেতরে বেজ অব দ্যা ব্রেনে যেখানে বিভিন্ন সার্কুলেটিং এনস্টমসিস যেটাকে সার্কেল অব উইলিস বলি। সেখানে বিভিন্ন রক্তনালীর সংযোগস্থল আছে। সেই সংযোগ স্থানের দুইটি জায়গায় দুইটা জাংসনে বেরি এনরিজম বলে একটা কথা আছে রক্তনালীর একটা সাইটে ফুলে যাওয়া অংশটা ফেটে গেছে। এই রক্ত নালীর একটা অংশ ফেটে গিয়ে ওখানে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আর সেই রক্তক্ষরণের কারনে তিনি শকে চলে গেছেন। এই কারণেই মৃত্যু হয়েছে। যেটা প্রাকৃতিক। যেটা ন্যাচারাল-বলে মন্তব্য করেন এ চিকিৎসক।
তিনি আরো বলেন, জেসমিনের শরিরে আমরা দুটো জখম পেয়েছি। একটা হচ্ছে কপালের বাম পাশে। যেটা ছোট। এটার সাইজ হচ্ছে ২.৫ সেন্টিমিটার। এক ইঞ্চিরও কম। এটা ঘসা লাগলে যেমন হয় এইরকম। আর একটা ছোট যখম পেয়েছি ডান হাতের কনুইয়ের ভিতর দিকে। এখানে একটা ফোলা জখম আছে। যেটার সাইজ হচ্ছে ২ সেন্টিমিটার।
আমরা চুড়ান্ত মতামতে উল্লেখ করেছি, যে জখমগুলো আছে সেগুলো মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয়। মৃত্যু হয়েছে শকে। শক হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে। মানসিক চাপ যদি কেউ কন্ট্রল করতে না পারে, মানসিক চাপ অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন দেখা যায় প্রেসার বেড়ে যাওয়ার কারণে কারো রক্তনালীর এনরিজম থাকে। এনরিজম একটা ডেভলপমেন্টাল ডিফেক্ট। এই ডেভলপমেন্টাল ডিফেক্ট যদি কারো থাকে তাহলে এই উইকেন পয়েন্টটা এ চাপটা নিতে পারে না। কখন এটা ফেটে যায়। ফেটে গিয়েইে এই রক্তক্ষরণটা হয়েছে। এই কারণেই জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে র‌্যাবের হেফাজতে মারা যাওয়া নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে জমা দিতে হবে হাইকোর্টে। এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর হাইকোর্ট কী নির্দেশ দেন, সেই অপেক্ষায় আছেন জেসমিনের স্বজনেরা।
জেসমিনের মামা নজমুল হক মন্টু বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) জেসমিনের কুলখানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আগামী ৫ এপ্রিল জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর হাইকোর্ট কি নির্দেশনা দেন, সে অপেক্ষায় আছি। তারপর পর আমরা মামলার সিদ্ধান্ত নেব।’ নজমুল হকের সন্দেহ, র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, র‌্যাব রাজশাহীর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে নওগাঁ থেকে জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র‌্যাব এ অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্ন জনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
আটকের পর ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। জেসমিনের মৃত্যুর পরদিন ২৫ মার্চ রামেকের মর্গে মরদেহের ময়না তদন্ত করা হয়।


প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ