শান্ত রাবি ক্যাম্পাস, পুলিশের মামলা

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসে নতুন কোনো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল থাকার পর সোমবার ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক লক্ষ্য করা গেছে। তবে সংঘর্ষস্থল বিনোদপুর বাজারে দোকানপাট বন্ধ ছিল। ক্যাম্পাস সংলগ্ন রেলপথ ও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে সংঘর্ষস্থল ও আশপাশের এলাকায় এখনও র‌্যাব ও পুলিশের ব্যাপক অবস্থান রয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০০ অজ্ঞাতের নামে পুলিশ করেছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার বিভূতিভূষণ ব্যানার্জি। রবিবার রাতে নগরীর মতিহার থানার এসআই আমানত উল্লাহ বাদী হয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়ার অভিযোগ এনে মামলাটি করেন। এর আগে রাবি প্রশাসনও অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের নামে মামলা করে। এছাড়া এই ঘটনায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্য সদস্যরা হলেন- সাবেক প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল হাসান এবং সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান।
এদিকে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। এসময় তিনি বলেন, গত ১১ মার্চ কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বিনোদপুরবাসীর সঙ্গে আমাদের ছাত্রদের একটি ঘটনা ঘটে। আমরা এতে মর্মাহত। আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরণের কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া ক্যাম্পাসের বাহিরে যে আমাদের শিক্ষার্থীরা বসবাস করে তাদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও মেসমালিকদের সঙ্গে আমরা শীঘ্রই আলোচনায় বসব। এছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করব।
এর আগে গত শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে তুচ্ছ ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় শিক্ষার্থীরা। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এসময় ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশ ফাঁড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল জ¦ালিয়ে দেয় স্থানীয়রা। শিক্ষার্থীরাও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনার জের ধরে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। কয়েক দফা দাবিতে এদিন তারা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে গেলে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন উপাচার্য। রাতে শিক্ষার্থীরা চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করলে কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল ব্যহত হয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে শিক্ষার্থীরা সরে যায়।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম ছিলো। তবে যথারীতি অফিসসমূহের কার্যক্রম অব্যহত ছিলো। ক্যাম্পাসের ভেতরেও যানচলাচল স্বাভাবিক দেখা যায়। সোমবার বিকেল ৪টায় এই প্রদিবেদন লেখা পর্যন্ত নতুন করে কোনো ঘটনা ঘটেনি। এদিকে বিনোদপুর বাজারে প্রায় সব হোটেল ও দোকান বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাস সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে বড় যানবাহন না চললেও ছোট বাহনগুলো চলতে দেখা গেছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক বলেন, আজকে (সোমবার) ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা তৎপর আছি। এছাড়া, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আজ আমরা প্রশাসনের মধ্যে বৈঠক করব। আসলে এ ঘটনায় কী করা যায়? পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে তাদের দাবিগুলো শুনে কাজ শুরু করব। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কাজ চলমান রয়েছে।


প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৩ | সময়: ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ