বিলুপ্ত মাদ্রাসার উন্নয়নের নামে জালসা, উত্তেজনা

মান্দা প্রতিনিধি: শুধু মাঠ আছে, নেই কোনো অবকাঠামো। নেই শিক্ষক-কর্মচারি কিংবা শিক্ষার্থী। অস্তিত্বহীন সেই মাদ্রাসার উন্নয়নের নামে আয়োজন করা হয়েছে ইসলামি জালসার। আগামি শুক্রবার ১ মার্চ এ জালসা অনুষ্ঠিত হবে।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের বিলউথরাইল পশ্চিমপাড়া ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে এ জালসার আয়োজন করেছে কথিত মাদ্রাসা কমিটি। এনিয়ে এলাকাবাসির দুপক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহুর্তে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জালসাকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ ওই মাঠে গ্রামবাসির দুপক্ষের সংঘর্ষে চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার কয়েক ব্যক্তি অস্তিত্বহীন মাদ্রাসার উন্নয়নের নামে জালসার আয়োজন করছে। জালসার খরচের পর অবশিষ্ট উপার্জিত অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে নির্বিঘ্নে কাজটি করছেন তারা।
বিলউথরাইল গ্রামের আব্দুস সাত্তার প্রামাণিক বলেন, বিলউথরাইল গ্রামে ১৯৬৯ সালে একটি হেফজখানা চালু করা হয়। ২০০৭ সালের দিকে সেখানে একটি দাখিল মাদ্রাসা স্থাপনের উদ্যোগ নেয় গ্রামের লোকজন। সে সময় হেফজখানার বিভিন্ন এলাকায় থাকা ৫৬ শতক জমি বিক্রি করে দাখিল মাদ্রাসার জন্য গ্রামের পশ্চিমপাশে ৮০ শতক অখন্ড জমি কেনা হয়। এরপর শুরু হয় মাদ্রাসার কার্যক্রম।
গ্রামের ইমরান আলী বলেন, নীতিমালা জটিলতায় ২০১২ সালে বিলউথরাইল পশ্চিমপাড়া ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা হয়। এরপর মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারিরা বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হন। মাদ্রাসা বিলুপ্ত হওয়ার পর সেখানে আবারো হেফজখানা চালু করেন গ্রামবাসি। এসময় মাদ্রাসার অনুকূলে থাকা জমি হেফজখানার নামে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সরেজমিনে বিলউথরাইল পশ্চিমপাড়া গ্রামে গিয়ে মাদ্রাসার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু রয়েছে একটি মাঠ। সেই মাঠে পশ্চিমপাশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট টিন সেডের একটি স্থাপনা দেখা যায়। কিন্তু সেখানেও কাউকেই পাওয়া যায়নি। দুই কক্ষই ছিল তালাবদ্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, টিনসেডের স্থাপনাটি একটি মক্তব। সকালে গ্রামের শিশুদের এখানে আরবি শেখানো হয়। এখানে মাদ্রাসার কোনো অস্তিত্বই নেই। কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে মাদ্রাসার নাম ভাঙিয়ে জালসার আয়োজন করছে।
জালসা আয়োজক কমিটির সদস্য পরিচয়ে মিলন রানা নামের এক যুবক বলেন, গ্রামে এক সময় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। অস্তিত্বহীন মাদ্রাসার নামে জালসার আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। মাদ্রাসা কমিটিতে কারা আছেন এ বিষয়েও তিনি কোনো কথা বলেননি।
এ প্রসঙ্গে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪ | সময়: ৬:২২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ