এবার প্রশাসনে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরই লিখিত অভিযোগ, থানায় জিডি

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী লাবণ্য খান প্রজ্ঞাকে নির্যাতন ও গণধর্ষণের হুমকির ঘটনায় এবার প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ও মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিফা হক শেফা। রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর তিন পৃষ্ঠার একটি লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
এছাড়া এদিন একই ঘটনায় নিজের নিরাপত্তাহীনতার জন্য নগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানিয়েছেন আতিফা হক শেফা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে আতিফা হক শেফা বলেন, গত ২৪ তারিখে, একই ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাতিন নওয়াল নেহাল ফেসবুকে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে ‘অপমানজনক’ পোস্ট করলে সেখানে ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লাবণ্য খান প্রজ্ঞা সিনিয়দের উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। এর প্রেক্ষিতে ফোন কলের মাধ্যমে আমি তার সঙ্গে (নেহাল) প্রায় ১ ঘন্টা পোস্টের কারণ সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু সে আমার কথা গ্রাহ্য না করে, ওই দিন মধ্যরাতে সকল সিনিয়রকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি মাই ডে দেয় ।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করে শেফা বলেন, ফেসবুক পোস্ট এবং মাই ডের প্রেক্ষিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সকাল ১০ টায় শেখ রাসেল মাঠের পুকুর পাড়ে তাকে ডাকা হয়। ব্যাচের অন্য শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হওয়ার আগে থিমি এবং আমার সঙ্গে সিরাজী ভবনের সামনে নাসিরের চায়ের দোকানে নেহালের প্রথমে কথা হয় এবং সিনিয়র আপু হিসাবে আমি তাকে বোঝাতে থাকি যে, এই কাজটি তার করা ঠিক হয় নি। কিন্ত সে আমাদের সামনেই ‘আমি সিনিয়রদের কাওকেই … না’ বলে গালি দেয় এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবে নানাভাবে আমাকে উত্তেজিত করে এবং সে কথা গুলো রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
অভিযোগে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে লাবণ্য খান প্রজ্ঞার সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি, তাকে আমি কোনদিন ফোন দেইনি, ম্যাসেজ করিনি এবং আমি যেদিন ব্যাচ অনুযায়ী প্রজ্ঞার সাথে বসি। সেখানে আমি কোন প্রকার বাজে মন্তব্য করিনি কিংবা তার সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখিনি। তা সত্ত্বেও আমার রেকর্ড পুরো সামাজিক মাধ্যমে উদ্দেশ্যেমূলক ভাবে ছড়িয়ে দিয়ে আমার বেঁচে থাকার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
অভিযোগে শেফা আরও বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি এক পর্যায়ে নেহাল তার সিনিয়র আতিকুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলে ‘হ্যাঁ ভাই মাইডে তে উল্লেখিত আপনাদের …না।’ এমতাবস্থায়, আতিকুর রহমান ও নেহালের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে থাকে এবং নেহাল আতিকুর রহমানের টি-শার্টের কলার ধরে টানাটানি করে। পরবর্তীতে আমি নেহালকে বোঝানোর চেষ্টা করলে তৎক্ষণাৎ নেহাল ঔদ্ধত্য হয়ে আমার গায়ে অশালীনভাবে হাত দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাড টাচ করে। বিষয়টি একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দেখেন।
এছাড়া অভিযোগে শেফা উল্লেখ করে আরও বলেছেন, ঘটনার পরদিন নেহালের মা হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে কল দিয়ে আতিকুর রহমানকে হত্যার হুমকি দেয়। সেখানে তিনি বলেন ‘আমার বাসা রাজশাহীতে আমি তোমাকে যে কোন সময় গুম করে দিবো। তারপর আতিক আতংকিত হয়ে ফোন কেটে দেয়।
অভিযোগে শেফা বলেন, আমার অজান্তে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করা রেকর্ড এডিট করে সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেয় নেহাল এবং প্রজ্ঞা। সারাদেশে আমার ছবি ব্যবহার করে, অর্ধ-সত্য তথ্য পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে, আমাকে রেপিস্ট সজিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তাতে আমি মানসিকভাবে পুরো ভেঙ্গে পড়েছি এবং আমার মনে হচ্ছে আমার আর বেঁচে থাকার কোন মানে নেই।
জানতে চাইলে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমাকে দুই পক্ষই লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য আমি অভিযোগ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি দেখতে হবে। ডিউটি অফিসারকে জিজ্ঞেস করতে হবে।’ এদিকে লাবণ্য খান প্রজ্ঞাকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ছয়জন সিনিয়র কর্তৃক এক জুনিয়র শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন ও গণধর্ষণের হুমকির ঘটনায় প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই দাবি জানায় তারা।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে গালিগালাজ, শারীরিক নির্যাতন ও বন্ধুদের দিয়ে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তিন ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় ভুক্তভোগী ছাত্রী।
এ ঘটনায় বিভাগের অভিযোগ তদন্ত কমিটির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগও দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এছাড়া সংবাদকর্মীদের নির্যাতনের অডিও ক্লিপও সরবরাহ করেন।


প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৩ | সময়: ৬:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ