বাগমারায় নেশাখোর স্বামীর নির্যাতনে আশ্রয়হীন গৃহবধূ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: বাগমারায় নেশাগ্রস্থ স্বামীর নির্যাতনে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে এক গৃহবধূ। বর্তমানে ওই গৃহবধূ বাগমারা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ গৃহবধূ শুক্রবার বিকেলে চার বছরের এক পুত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে ছুটে আসেন বাগমারা প্রেসক্লাবে। এ সময় গৃহবধূ তার উপর শারীরিক নির্যাতনের বর্ননা সহ কিছু আলামত তুলে ধরলে প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সহ স্থানীয় লোকজন বিমর্ষ হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাগমারা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
ওই গৃহবধূর নাম লতিফা বেগম (৪০)। তার স্বামী নরদাশ ইউনিয়নের জয়পুরা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিপির সদস্য আব্দুল হান্নান (৫২)। বিগত সাত বছর পূর্বে চারঘাঠ উপজেলার ওমরগাড়ি গ্রামের আব্দুল খালেকের কন্যা লতিফা বেগমকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে ঘরে তুলেন আব্দুল হান্নান। পরে তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে।
গৃহবধূ লতিফা বেগম ও তার প্রতিবেশিরা জানান, বিয়ের পর থেকেই প্রতিনিয়িত যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালায় আব্দুল হান্নান। সে পূর্ব থেকেই নেশাগ্রস্থ। মদ, ইয়াবা ও গাঁজা নিয়েই সবসময় পড়ে থাকে। ক্রমেই হান্নানের নেশার মাত্রা বাড়তে থাকে। সেও বেপরোয়া হয়ে ওঠে আরো যৌতুকের জন্য। স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়েও সংসার টিকানোর স্বার্থে গৃহবধু লতিফা বেগম তার বারা বাড়ি থেকে কয়েক দফা যৌতুন এনে দিলেও নির্যাতনে বন্ধ করেনি তার স্বামী।
এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গ্রাম্য মাতব্বরা একাধিক বার নিস্পত্তির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুলের শরনাপন্ন হন গৃহবধু লতিফা বেগম। আবুল বিষয়টি নিয়ে নিস্পত্তির চেষ্টা করলেও হান্নানের একঘেয়েমীর কারণে তা ভেস্তে যায়। পরে গৃহবধু তার নেশাগ্রস্থ যৌতুকলোভী স্বামীর অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে বাগমারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তা নিতে গড়িমসি করে।
লতিফা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী আব্দুল হান্নান ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের নিকট আত্মীয় হওয়ায় পুলিশ তার অভিযোগটি আমলে নিতে অনীহা প্রকাশ করেছে।
এদিকে নিরুপায় গৃহবধূর উপর চলতে থাকে ধারাবাহিক নির্যাতন। শুক্রবারও তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় তার স্বামী। লতিফা জানান, শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে তাকে শিশু সন্তান সহ ঘরের দরজা বন্ধ করে বেধড়ক মারপিট করে স্বামী আব্দুল হান্নান। ওই দিন বিকেল পর্যন্ত চলে তার ওপর নির্যাতন। তাকে মুখে বিষ ঢেলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন আব্দুল হান্নান।
বিকেলে কিছু সময়ের জন্য হান্নান বাড়ির মেইন গেইটে তালা দিয়ে বাইরে গেলে প্রাচীর টপকিয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে প্রতিবেশির বাড়িতে আশ্রয় নেন লতিফা বেগম। তাদের সহায়তায় ছুটে আসেন বাগমারা প্রেসক্লাবে। এখানে সাংবাদিকদের কাছে তার উপর দিনের পর দিন ধরে চলা নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরার সময় যন্ত্রনায় কাতর ও নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে বাগমারা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে গেলে আব্দুল হান্নান ফোনে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, আপনারা যা পারেন আমার বিরুদ্ধে লিখেন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা গোলাম সারোয়ার আবুল বলেন, তাদের দাম্পত্য কলহের বিষয়ে একাধিকবার নিস্পত্তি করে দিয়েছি। কিন্তু তারা তা মেনে চলেনি।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান ওই গৃহবধূ এর আগে থানায় এসেছে বলে আমার জানা নেই। তবে এখন থানায় এসে অভিযোগ দিতে চাইলে আমরা তা গ্রহন করব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ