জেসমিন ও যুগ্ম-সচিবের মধ্যে মিলছে অর্থ লেনদেনের প্রমান

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নতুন নতুন তথ্য। ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক সুলতানা জেসমিন নিহতের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার থেকে নওগাঁ সার্কিট হাউজে বিকেল তিনটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সুলতানা জেসমিনের ছেলে ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তদন্ত শুরু করেছেন কমিটির সদস্যরা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ ৮ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করে।
এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরা জেসমিন ও যুগ্ম-সচিব এনামুলের মাঝে বিকাশে লেনদেন সহ জেসমিনের রেখে যাওয়া ৪৬টি চিরকুটে কি কি ছিল তা পরিবারের সদস্যরা জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটির কাছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নিহত জেসমিনের মামা নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, আমার ভাগ্নির রেখে যাওয়া প্রায় ৪৬টি চিরকুট থেকে তার সাথে এনামুল হকের প্রত্যেকটা লেনদেনের তথ্য আমরা পেয়েছি।
জেনমিনকে পদোন্নতি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছে থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছিলেন এনামুল। পরে জেসমিনের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জয়পুরহাট ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন জনের থেকে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা নেন এনামুল। প্রথমে এসব টাকা জেসমিনের অ্যাকাউন্টে নিয়ে টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়েছে এবং বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে এনামুল টাকা গ্রহন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিনেও পদোন্নতি না পাওয়ার পর জেসমিন যখন এনামুলের এসব তথ্য ফাঁস করে দিতে চেয়েছিলো, ঠিক সেই মুহুর্তে তাকে হত্যার চেষ্টা শুরু করা হয়। র‌্যাবের হাতে আটকের আগে বেশ কয়েকদিন যাবত জেসমিনের বাড়িতে কয়েকজন বিভিন্ন পরিচয়ে গিয়েছে। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার অযুহাত দেখিয়ে একদিন রাতে গিয়েও বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছে।
হয়তো ওইদিন রাতে বাড়িতে ঢুকলেই র‌্যাব ভাগ্নীকে মেরে সব প্রমাণ নিয়ে চলে যেতো। বিকাশ ও নগদে লেনদেনের তারিখ, নম্বর সহ এনামুলের সম্পর্কে অনেক কিছুই ভাগ্নি চিরকুটে লিখে রেখেছিলো। যা সেদিন তদন্ত কমিটির কাছে বুঝে দিয়েছি। নিরপেক্ষ তদন্ত হবে এটাই কামনা করছি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সমন্বয়ক ও সংষ্কার সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিকে বলা হয়েছে ১৫ দিনের মধ্য রিপোর্ট দাখিল করার জন্য। সেই পেক্ষাপটে নওগাঁতে এসেছি, এখানে কমিটির সকল সদস্য রয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যক্ষদর্শীর স্বাক্ষর গ্রহণ করা হচ্ছে।
সুলতানা জেসমিন ও যুগ্ম-সচিব এনামুলের মাঝে আর্থিক লেনদেনের কিছু তথ্য তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের কাছে দিয়েছেন। জেসমিনের পরিবারের সদস্য, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের সাথেই পর্যায়ক্রমে কথা বলা হচ্ছে। আমরা তদন্ত কমিটির সদস্যরা এখনো নওগাঁতেই আছি। নির্ধারিত সময়ের আগেই উচ্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমি দেওয়ার চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁর চুন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ আদালতের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে।
কমিটির অন্যান্য সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে।
এর আগে র‌্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ রাজশাহী স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক যুগ্ম-সচিব এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সাথে নিয়েই নওগাঁর চন্ডিপুর ইউনিয়ন ও পৌরসভা ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে আটক করে। আটকের পরের ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান।


প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ