নওগাঁয় রঙ্গিন বাঁধাকপি চাষে সফল পান্না বানু

নওগাঁ প্রতিনিধি: প্রথমবারের মতো লালচে বেগুনি রংয়ের বাঁধাকপি (রেড ক্যাবেজ) চাষ হচ্ছে উত্তরের বরেন্দ্র জেলা নওগাঁয়। বিদেশী এই সবজি চাষে সফল হয়েছেন নওগাঁর বদলগাছীর বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক পান্না বানু। তার এই সবজি দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। আশপাশের অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন দেখতে আসছেন তার রঙিন বাঁধাকপির খেত। সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত বদলগাছী উপজেলা। এ উপজেলায় শত শত বিঘা জমিতে সবজি চাষ হলেও রেড ক্যাবেজ চাষে সফল একমাত্র পান্না বানু। কারন জেলায় তিনি একমাত্র প্রথম এই বাঁধাকপি চাষ করেছেন। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর আবু বক্করের স্ত্রী।
পান্না বানু বলেন, বাড়ির পাশে তাদের ১৮ শতক জমি রয়েছে। ওই জমিতে এতদিন তারা ধান চাষ করতেন। মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে মাঝে মাঝে আলু ও সরিষার চাষ করতেন। এবার মৌসুমী এনজিওর এক কর্মী তাকে ওই জমিতে লাল বাঁধাকপি চাষের কথা বলেন। লাল বাঁধাকপি চাষে রাজি হলে ওই এনজিও থেকেই বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়। চাষের নিয়মাবলিও এনজিওর লোকজন শিখিয়ে দেন। তাদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৮ শতক জমিতে দেড় হাজার লাল বাঁধাকপির বীজ বপণ করেন। বীজ বোপণের তিন মাসের মাথায় পান্না বানুর খেতে শোভা পাচ্ছে লালচে বেগুনি বর্ণের বাঁধাকপি। দুই সপ্তাহ ধরে পান্নার স্বামী আবু বক্কর রঙিন বাঁধাকপিগুলো বিক্রি করছেন। তিনি আরো বলেন, মৌসুমী এনজিওর প্রদর্শনী খেত হওয়ায় বীজ ওরাই দিছে। সারও কিছুটা দিছে। বাজারত থেকে আরও কিছু সার কিনা লাগিছে। এছাড়া সামান্য কীটনাশক কিনিচি। সবমিলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হছে। কয়েকদিন ধরে প্রায় ৬ হাজার টাকার কপি বিক্রি হছে। এ রকম দাম প্যালে আরও প্রায় ২০ হাজার টাকার কপি বিক্রি হবে। পান্নার বাঁধাকপির খেত দেখতে আসা গোবরচাঁপা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রামের একজনের কাছ থেকে শুনে পান্নার খেত দেখতে আসলাম। আমারও ইচ্ছে আছে নতুন জাতের এই বাঁধাকপি চাষের। এজন্য খেত দেখতে এসেছি। রঙিন হওয়ায় বাঁধাকপিগুলো দেখতে খুব ভালো লাগছে। পান্নার স্বামী আবু বক্কর বলেন, সাধারনত সবুজ-সাদা একটি বাধাকপি বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায় সেখানে তাদের খেতের প্রতিটি রঙিন বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। বাজারে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সব লালচে বেগুনি বর্ণের বাঁধাকপি শেষ হয়ে যায়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহযোগিতায় সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রকল্পের অধীনে হতদরিদ্র মানুষদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে কাজ করছে মৌসুমী। ২০২১ সাল থেকে নতুন ও উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি ও ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করে কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ১৪২জন কৃষককে উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি ও ফলের বীজ ও চারা বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই কৃষকদের তাদের সংস্থার পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, সরকারের নির্দেশনায় কৃষিবিষয়ক নতুন তথ্যপ্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষিবিভাগ। মৌসুমী নামের একটি বেসরকারি সংস্থা পরীক্ষামূলকভাবে পান্না বানু নামে এক কৃষককে রেড ক্যাবেজ চাষে সহযোগিতা করেছে। এটা খুবই প্রশংসনীয় একটি কাজ। পান্না বানু সফল হওয়ায় আগামী বছর রঙিন বাঁধাকপি চাষির সংখ্যা বাড়বে। আর রঙিন বাঁধাকপি পুষ্টিকর এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ