সর্বশেষ সংবাদ :

অনুকূল আবহাওয়ায় সতেজ সরিষাক্ষেত

মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি আর উপকরণ খরচ কমাতে বাগমারায় বিগত বছরের চেয়ে অধিক জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। কম খরচে বেশী লাভের আশায় এবার এলাকায় সরিষার চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং মৌমাছিরা ফুলে সঠিক ভাবে পরাগায়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হলে এ উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছেন কৃষকেরা। তবে গত কয়েকদনি ধরে ঘন কুয়াশায় সরিষা ক্ষেতের পচনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দেয়। এদিকে ফলন বিপর্যয় এড়াতে কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা ছত্রানাশক কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, এ এলাকার লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখানে কৃষকরা ব্যাপক হারে পাট, ধান, আলুসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে। ধান চাষে কৃষককের উৎপাদিত ফসলের মূল্য হ্রাসে উৎপাদন খরচ জুটছে না। বোর মওসুমে ধান বিক্রি করেছেন ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ। পাট বিক্রয় করেছেন ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা মন দরে। এতে কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারেননি। তাই অল্প খরচে অধিক লাভজনক সরিষা চাষে কৃষক ঝুঁকেছেন।
উপজেলার বালানগর গ্রামের কৃষক, ফসির উদ্দিন, মজিবর রহমান, কাজেম আলীসহ অনেকে জানান, বহুদিন ধরে তারা কৃষি কাজ করে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে কৃষি উপকরণ ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধিতে বর্তমানে লোকশান গুণতে হচ্ছে। ধান, পাট ও আলু চাষ করে এবছরে কোন অর্থ তারা যোগাতে পারেননি। লোকশানের পরিমান বেশি হয়েছে। তাই স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে কম খরচের ফসলা সরিষা চাষ করেছেন।
সরজমিনে বাগমারার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌর এলাকার দিগন্ত জোড়া মাঠে এখন সরিষার ফুলের হাতছানি। এ বছর টরি ১৪, ৭ ও ৮ জাতের সরিষার আবাদ কৃষককের নজর কেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে দিকে ভারি বর্ষণের কারণে সঠিক সময়ে জমিতে সরিষার বীজ বপন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে গত বছর এ অঞ্চলে সরিষার আবাদ কিছুটা কম হয়েছিলো।
তবে চলতি মওসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় অক্টোবরের মাঝামাঝি দিকেই কৃষকেরা জমিতে সরিষা বীজ বপন করেছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছিরা মধু আহরনের লক্ষ্যে সরিষা গাছের ফুটন্ত ফুলে বসে পরাগায়ন সৃষ্টি করছে। তবে গত কয়েক দিনে দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ ঘন কুয়াশায় ফলন বিপর্যয় শঙ্কা করছেন কৃষকরা।
তবে উপজেলার কৃষি অফিসের তদারকিতে রোগ প্রতিরোধে কৃষকরা ছত্রানাশষ স্প্রে করছেন বলে উপজেলায় কর্মরত বাসুপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্বশীল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহাগ ইসলাম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন জমিতে সরিষার গাছ পরিপুর্ণ হয়ে উঠছে। ঘনকুয়াশা নামতে শুরু করায় শঙ্কা ছিল। তবে আবহাওয়া মোটামুটি কেটে গেছে। এছাড়া সন্ধ্যার আগে কীটনাশক দিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। এ ক্ষেত্রে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাগমারা উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিবুর রহমান বলেন, চলতি রবি মওসুমে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু কৃষকেরা কম খরচে স্বল্প সময়ের সরিষা চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়ায় লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভা এলাকায় চলতি মওসুমে ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে টরি-৭ ও ১৪ জাতের সরিষার চাষ করা হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে রাই, জাপানী ও দেশী জাতের সরিষা।
এবছরে অন্য বড় ধরনের দুর্যোগ বালাই না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২১ | সময়: ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ