পবায় কৃষি ‘জমি খেকো’ মিনারুলের অত্যাচারে অসহায় সাধারণ কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার : শহরে যেমন কোন পুকুর বন্ধ করা যাবেনা, তেমনি উপজেলা পর্যায়ের আবাদী জমি নষ্ট করে পুকুর খননে সরকারীভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ তা বৈধ মনে করে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে অবাধে কাটছে পুকুর। আর এই সব পুকুর খননে মদদ দিচ্ছে প্রশাসন, স্থানীয় সরকারের নেতৃবৃন্দ ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এমনটাই অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী।
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলা কর্ণহার এলাকার দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপকভাবে পুকুর খনন হলেও প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনী নিরব রয়েছে। তাদের ম্যানেজ করে দারুশা এলাকার মৃত হারুনর রশিদ ওরফে হারানের ছেলে পুকুর খনন সিন্ডিকেটের প্রধান মিনারুল ইসলাম, বিগত কয়েক বছর থেকে কর্ণহার ও এর আশেপাশের বিল এলাকায় পরিবেশ ও রাস্তাঘাট নষ্ট করে বেপরোয়াভাবে অবৈধ পুকুর খনন চালিয়ে যাচ্ছে। এই মিনারুল সরকারী দলের একজন নেতা দাবী করে জমির মালিকদের অত্যাচার করছে। পুকুর খননের জন্য জমি না দিলে নির্যাতন করে জমি দখলে নেন বলে জানান এলাকাবাসী।
আরো অভিযোগ রয়েছে, মিনারুল তার ঘনিষ্ট আত্মীয়-সব্জনদেরও জমি জোর করে দখল করে পুকুর খনন করেছে। এখনো পকুর খনন করার জন্য জমি লিজ নিয়েছেন বলে জানান গেছে। সেখানকার লোকজন পুকুর খননের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে বার বার উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, আর.এম.পি কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছেন না।
অভিযোগকারীদের মধ্যে লিটন, আইনাল (জালাল), নাসির, রাসেল ও মিলন নামে ভূক্তভোগিরা বলেন, মিনারুল কর্ণহার থানা পুলিশের সাথে সখ্যতা করে ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পুকুর খননের ব্যবসা করে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। এখন তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। অথচ কয়েক বছর পূর্বেও এই মিনারুলের আর্থিক অবস্থা ছিলো অত্যন্ত খারাপ।
অভিযোগকারী আব্দুল আজিজসহ আরো অনেক বলে, এই মিনারুল বাগধানি, কর্ণহার, দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পুকুরখননের জন্য ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি পুকুর খনন চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
তারা আরো জানান জমি দিতে রাজি না হওয়ায়, তাদের জমির চারপাশে পুকুর খনন করে জিম্মি করার চেষ্টা করছে মিনারুল। কর্ণহার থানা পুলিশ বিষয়টি জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, পবা সহকারী কমিশনার বলছেন, সাতাশটি এসকেবিউটর (মাটি কাটার মেশিন) জব্দ করেছেন। কিন্তু জব্দকৃত মেশিনগুলো কোথায় আছে তার কোন হদিস নেই। এক কথায় অভিযানে জব্দ দেখালেও কাজে নেই। অভিযান থেকে ফিরে আসতেই আবার সেই জব্দকৃত মেশিন মাটিকাটার জন্য ব্যবহার করছে বলে জানান তারা। এত মাটিকাটার মেশিন জব্দ করলে রাজশাহীতে আর মাটি কাটা মেশিন পাওযার কথা না বলে উল্লেখ করনে তারা।
তারা আরো বলেন, পুকুর খনন বিষয়ে থানা ও উপজেলা ভূমি অফিসকে খবর দিলে গড়িমশি করে এবং ঘন্টার ঘন্টা বসিয়ে আসেন না। যখন জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ফিরে যান তখন তারা রাতের অন্ধকারে অভিযানে যান। আবার অনেক সময় যারা খবর দেন তাদেরকেই ভয়ভীতি দেখান এবং আটক করে সাথে থাকা মোবাইলসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী জব্দ করে নেন এবং হয়রানী করেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
তারা আরো বলেন, মিনারুলের বেপরোয়া ও অবৈধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কাছে এলাকার মানুষ ও কৃষি জমি জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই জমিতে পুকুর খনন করায় সাধারণ কৃষকগণ সেচের পানির অভাবে এবং জলাবদ্ধতার কারণে
তিনফসলী কৃষিজমিতে ফসল ফলাতে পারবে না। কেউ কৃষকের পক্ষে তার অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও লাঞ্ছিত করছে।
ইতোপূর্বে বারবার প্রশাসন ও পুলিশকে জানিয়ে তার পুকুর খনন সাময়িকক বন্ধ করলেও তিনি পুনরায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে পুকুরখনন চালিয়ে যাচ্ছে। দিনে কখনও রাতে উপজেলা প্রশাসন পুকুরখনন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কর্মচারীদের সহযোগিতায় রাতে সে নির্বিঘ্নে পুকুর খনন চালায় বলে তারা অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী বলেন, মিনারুলের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ। এরপরেও তিনি কিভাবে নির্বিঘ্নে পুকুর খনন করে চলছেন। এর খুঁটির জোর কোথায়। খুটিসহ মিনারুলকে আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তারা।
সোমবার সন্ধ্যার পরে পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলিশ নিয়ে বড়বিলের পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময়ে মূল হোতা মিনারুলকে পুলিশ আটক করেন বলে কইকুড়ি মোড়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সেইসাথে মিনারুল হ্যান্ডকাপ পরিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসে বলে উল্লেখ করেন তারা। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহন না করে অজ্ঞাত কারনে পুলিশ মিনারুল ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে কর্ণহার থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, সোমবার সন্ধ্যার পওে মিনারুলকে আটকের উদ্দেশ্যে পুকুরের চারিদিকে তারা ঘেরাও করেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মিনারুল ডোবার মধ্যে নেমে পরলে পুলিশ ডোবাতে নামতে চায়নি। এজন্য তাকে আর আটক করা সম্ভব হয়নি।
মিনারুলকে আটক ও ছেড়ে দেয়া বিষয়ে জানতে চাইলে পবার হুজরীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা বলেন, ঘটনাটি তার ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় নয়। মিনারুলকে আটক ও ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে জানান।
পুকুর খনন বিষয়ে পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত মোবাইলে বার বার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এজন্য তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩ | সময়: ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর