আখেরি মোনাজাত শেষে বাড়ি ফিরতে মানুষের ঢল

সানশাইন ডেস্ক: আখেরি মোনাজাত শেষে ইজতেমায় আগতরা টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ ও এর আশপাশের এলাকা থেকে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। বাস, মিনি ট্রাক, ঠেলা গাড়িতে করে ঢাকায় ফিরছেন মানুষ; ভিড়ে ট্রেনগুলোতে তিল পরিমাণ জায়গা নেই।
মোনাজাতের শুরুতে মানুষ দলে দলে ইজতেমা মাঠের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন; মোনাজাত শেষ হওয়ার পর সবাই একসঙ্গে ফিরতে শুরু করায় যানবাহনের সঙ্কটে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই ঢাকার বিমানবন্দর ও গাজীপুরের বিভিন্ন সড়কে ইজতেমা ফেরত হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
ইজতেমা মাঠ থেকে ঢাকার সরাসরি কোনো গণপরিবহন নেই। উপায় না দেখে অনেকে হেঁটেই রওনা হন; কেউ কেউ আবার কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে প্রাইভেটকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যান ভাড়া করেন। যারা ইজতেমা মাঠে না যেতে পেরে স্টেশন রোড, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট, উত্তরা কিংবা বিমানবন্দরের বিভিন্ন এলাকায় থেকে মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলেন, তারাও একই সময় ফেরা শুরু করে। ফলে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বনানীমুখী সড়ক জনস্রোতে পরিণত হয়; তাদের বেশির ভাগই হেঁটে ফিরছিলেন। পাশাপাশি বাস, মিনি ট্রাক, ঠেলা গাড়িতে করে ঢাকায় আসছেন। ট্রেনগুলোতে তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই।
একই তো মানুষের চাপ; তার উপর গাড়ি না থাকায় ফিরতি লোকজনদের ভোগান্তি আঁচ করা যাচ্ছিলো সহজেই। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সে কথা জানালেনও কেউ কেউ। ঢাকার কাকরাইলের আলামিন বলেন, ফিরতি পথে অধিকাংশ মানুষ হেঁটেই ঢাকার দিকে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পিকআপ ভ্যান বা অটোরিকশা পেয়েছেন। গাজীপুরের পূবাইল এলাকার নওজেশ আলী বলেন, আখেরি মোনাজাতের শুরুতে মানুষ দলে দলে ইজতেমা মাঠের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু মোনাজাত শেষ হওয়ার পর সবাই একসঙ্গে ফিরছেন বলে যানবাহনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে গুণতে হচ্ছে বেশি ভাড়া।
আব্দুল্লাহপুর থেকে পিকআপ ভ্যানে করে আখেরি মোনাজাত শেষে বিমানবন্দর এসেছেন সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “মোনাজাত শুরু আগে বিমানবন্দর থেকে ১৫০ টাকায় পিকআপ ভ্যানে করে আব্দুল্লাহপুর গিয়েছিলাম। এখন ফিরতি পথে ২০০ টাকা দিয়ে আসতে হয়েছে। “একসঙ্গে অনেক মানুষ রওনা হওয়ায় অল্প সময়ের ব্যবধানে ৫০ টাকা ভাড়া বেড়ে গেছে।”
মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে ইজতেমা মাঠ থেকে উত্তর বাড্ডায় এসেছেন সোলায়মান মিয়া। তিনি জানালেন, উত্তরা যেতে তার খরচ হয়েছিল ২০০ টাকা; এখন ৪০০ টাকা দিয়ে ফিরতে হচ্ছে। যাত্রী বেশি দেখে চালকরা ভাড়াও বেশি চাইছেন। অন্যদিকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পথে হেঁটেই রওনা হয়েছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, “ইজতেমা মাঠে যাওয়ার সময় বাস-অটোরিকশা দিয়ে গেলেও এখন কোনো গাড়িই পাচ্ছি না। এখন হেঁটে খিলক্ষেত যাব, সেখান থেকে কুড়িল গিয়ে বাসে রওনা হব। নাহলে হেঁটেই বাসায় ফিরব।”
নেত্রকোণার সফর আলী বলেন, ‘‘ ইজতেমা শেষ, এখন বাড়িতে যাবো। ঢাকায় মহাখালী গিয়ে বাড়ির বাস ধরবো।” সফর আলীর মতো ৭০ বছর বয়সী শেরপুরের করীম মিঞা যানবাহনের অপেক্ষায় থেকে কোনো রকমে মহাখালী এসেছেন দেড়শ টাকায়। তিনি বলেন, ‘‘আখেরি মোনাজাত শেষ হয়েছে সাড়ে ১০টায়; অথচ এখন বাজে ১টা। এখন শেরপুরের বাসে উঠব।”
শুক্রবার তিনি শেরপুর থেকে কয়েকজনের সঙ্গে ইজতেমায় আসেন। তারা দুই সঙ্গী এক সঙ্গে থাকলেও মোনাজাতের পর যাত্রাকালে ভিড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। মহাখালীতে তাদের আবার সাক্ষাত হবে বলে জানালেন করীম। এদিকে ইজতেমা ফেরত লোকজন ট্রেনও গাদাগাদি করে উঠছে। সকাল থেকে ইজতেমা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত তিনটা ট্রেন কমলাপুর গেছে। এসব ট্রেনে তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিলো না।
ইকরাম আরও বলেন, বাস না পেয়ে অনেকেই হেঁটে আসছেন। কেউ বিমান বন্দরের কাছে এসে বাসে উঠছে, কেউ বনানী কাকলির কাছ থেকে যানবাহন খালি পেলে উঠছেন। হাফিজুর রহমান নামের আরেক যাত্রী বলেন, “আখেরি মোনাজাত শেষ করেই আমি হাঁটা শুরু করি। আমার সঙ্গে এরকম হাজার হাজার মানুষ হেঁটে আসছে। বিমান বন্দরের কাছে এসে একটা মিনি ট্রাকে মহাখালী যাচ্ছে ১০০ টাকায়।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সাতজন এসেছি কুমিল্লা থেকে। এখন যত তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছতে পারি তত ভালো। কারণ সকলে অপেক্ষায় আছেন।” এদিকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে বাসগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাত্রীদের জন্য; মহাখালী ফ্লাইওভারের কাছে দুপুরে খালি বাসের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সা’দের অনুসারীরা।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ