রাসিকের ১ হাজার ১৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা, ব্যাপক কর্মযজ্ঞের আয়োজন : রাজশাহী হবে দেশের প্রথম স্মার্ট সিটি

স্টাফ রিপোর্র্টার : আয়-ব্যয় সমান রেখে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের হল রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আয় ও ব্যয় সমপরিমাণ ধরে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এক হাজার ১৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ১০০ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো এক হাজার ৭ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৩ টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৬১৮ কোটি ১১ লাখ ২ হাজার ২১০ টাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র লিটন বলেন, আগামী দিনে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে সম্পূর্ণ বাস্তবতার নিরিখে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামীদিনে ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সাল নাগাদ দেশ হবে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ। সেই পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্মার্ট রাজশাহী বিনির্মাণেও এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। যা আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। রাজশাহীই হবে দেশের প্রথম স্মার্ট নগরী। এছাড়া মহানগরীর যানজট নিরসনে আরো ৫টি ফ্লাইওভার ও একটি ট্যানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় মেয়র জানান, দুই হাজার ৯৩১ কোটি ৬১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর উন্নয়নে এক হাজার ৯৬২ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। যার মধ্যে এক হাজার ৮১৬ কোটি টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে হতে ইতোমধ্যে এক হাজার ২২০ কোটি টাকা অবমুক্ত হয়েছে। বর্তমান ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের অত্র প্রকল্পে সরকার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। প্রকল্পের চলমান কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ৫৬শতাংশ।
মহানগরীর যানজট নিরসনে ৫টি ফ্লাইওভার ও একটি টানেল নির্মাণ করা হবে। নতুন বিলসিমলা, বন্ধগেট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং-এ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্ত্বরে ফ্লাইওভার নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভদ্রা মোড়ে অত্যাধুনিক টানেল নির্মাণের নকশা প্রণয়ন কাজ চলছে। ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ব্যয়ে তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ৬ লেন সড়ক নির্মাণ চলমান রয়েছে। ৪.১০ কিলোমিটার সড়কের মাঝে থাকবে ২ মিটারের সড়ক ডিভাইডার। ডিভাইডারের দুইপাশে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলের জন্য ১০.৫ মিটার প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। নিরাপদে চলচলের জন্য সড়কের উভয়পাশে থাকবে ৩ মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন ও ৩ মিটার প্রশস্ত ফুটপাত ও ড্রেন। ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত বর্তমান দুইলেন সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ৩.৫৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি ২৪.২০ মিটার প্রশস্ত করা হয়েছে। উভয়পাশে ৭.৩০ মিটার রাস্তা, রাস্তার উভয় পাশের্^ ১.২০ মিটার ড্রেন ও ফুটপাত, ফুটপাত ও ড্রেনের উভয়পাশে ৩ মিটার করে ৬ মিটার স্লো মুভিং ভিহেকেল রাস্তা, রাস্তার মাঝে ১.২০ মিটার ডিভাইডার নির্মাণ হয়েছে। ফলে উক্ত সড়কটি নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন হয়েছে।
তিনি আরো জানান, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার ‘হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্প’ কাজ চলছে। ৩০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন হয়ে বর্তমান অর্থ বছরে ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে।
আলোকায়ন ব্যবস্থার সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, রাজশাহী মহানগরীর আলোকায়ন ব্যবস্থা আরো আধুনিকায়ন, রাতে নাগরিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে মহানগরীর ১৭টি চত্বরে ১৮টি আধুনিক মানের সুুউচ্চ বিদ্যুৎ লাইটের পোল স্থাপন করা হয়েছে। তালাইমারি মোড় থেকে আলুপট্টি পর্যন্ত ২.৫ কিলোমিটার সড়কের আইল্যান্ডে বসানো হয় ১৩০টি আধুনিক সড়কবাতির দৃষ্টিনন্দন পোল। প্রতিটি পোলের মাথায় লাগানো হয়েছে ১৩টি আধুনিক লাইট। এছাড়া সড়ক সংলগ্ন বাঁধে স্থাপন করা হয়েছে ১৮০টি আধুনিক সুদৃশ্য গার্ডেন লাইটের পোল। প্রতিটি পোলে রয়েছে ৫টি অত্যাধুনিক লাইট। অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ও নিভে।
হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে জানিয়ে মেয়র বলেন, বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও নবরুপায়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান টার্মিনাল ভবন নবরুপায়ন, সম্প্রসারণ ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রবর্তন করা হবে। শহীদ এ.এইচ. এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা রাজশাহী মহানগরীর একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। এটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরও আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী “নভোথিয়েটার” নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। এরমধ্যে বিসিক কর্তৃক বিসিক শিল্পনগরী-২ প্রকল্পটি রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের কেচুয়াতৈল এলাকায় ৫০ একর জায়গায় ১৭২ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও চামড়া শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপকে রাজশাহীতে বিনিয়োগে তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক পুরোপুরি চালু হলে সেখানে ১৪ হাজারের অধিক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় ও বিকেএসপি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং প্রকল্পের পাশর্^বর্তী এলাকাসমূহে নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে শহর আরো বিকশিত ও কর্মমুখর হবে। ইতোমধ্যে নগরীতে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন ছাড়াও উর্ধতন কর্মকতাবৃন্দ, কাউন্সিলর ও নগরীর সূধিজন উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৩ | সময়: ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ