সবাইকে ছাড়িয়ে শেখ হাসিনা

সানশাইন ডেস্ক: দশম বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান দলের নেতারাদশম বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান দলের নেতারা
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসহ গত ৭৪ বছরে সব আন্দোলন-সংগ্রাম, অর্জন, আর ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম। শোষিত, বঞ্চিত আর খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে দলটির হাত ধরে সাত দশকের বেশি সময়ে বহু নেতা তৈরি হয়েছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এসব নেতাকে ধীরে ধীরে দল পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করে সফল হয়েছে আওয়ামী লীগও।
শনিবারের সম্মেলনসহ দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৭৩ বছরে ২২টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে। এ সম্মেলনগুলোতে বঙ্গবন্ধুসহ দেশবরেণ্য অনেক নেতাই এ দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কার্যনির্বাহী কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ ১০ বার দলের সভাপতির দায়িত্ব পেলেন।
১৯৮১ সালের ১৩তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আনা হয় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। ১৯৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিল তিন হাজার ৮৮৪ জন। সভায় শেখ হাসিনা সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর থেকে টানা সভাপতির পদে নির্বাচিত হয়ে আসছেন শেখ হাসিনা। এদিকে রানিং মেট হিসেবে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন তিনি।
এদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার দিক থেকে পিতা শেখ মুজিবকে আগেই ছাড়িয়ে গেছেন কন্যা শেখ হাসিনা। যুগ্ম সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্যসহ সব পদ মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু ২৬ বছর দলের রাজনীতিতে ছিলেন। অপরদিকে সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ৪১ বছর ধরেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সদ্যবিলুপ্ত কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ওই কমিটিতে শেখ হাসিনাই সব থেকে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। এই কমিটিতে তার থেকে সিনিয়র ছিলেন কেবল সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। গত জুলাইয়ে তিনি মারা মারা যান। এছাড়া দু-একজন রাজনীতিতে শেখ হাসিনার থেকে সিনিয়র হলেও অতীতে তাদের অন্য দলে রাজনীতির অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও শেখ হাসিনার থেকে দু-একজন সিনিয়র হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা মিলেছে তার পরেই। শেখ হাসিনার হাত ধরেই তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন।
বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর সভাপতি পেয়েছেন ছয় জন। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চারবার সভাপতি হন। অবশ্য ১৯৫৭ সালে সভাপতি হওয়ার পর কিছুদিন পরই তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপ গঠন করেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ একবার দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ভাসানী দল ত্যাগ করলে তর্কবাগীশ ওই টার্মও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এর বাইরে একবার আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এখন পর্যন্ত নয় জন। সবচেয়ে বেশি চার বার করে এ পদে নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। ২২তম সম্মেলনে নতুন মেয়াদের দায়িত্বসহ ওবায়দুল কাদের টানা তিন মেয়াদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন ওবায়দুল কাদের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে এর আগে দুবারের বেশি কেউ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না।
এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুই বার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও আবদুল জলিল এক বার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২২ | সময়: ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ