রবিশষ্যের জন্য বরাদ্দ সার যাচ্ছে পুকুরে

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাগমারায় মাছের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকলেও রাজশাহীর বাগমারায় রবি শস্যের জন্য বরাদ্ধ সার ব্যবহার করা হচ্ছে পুকুরে। এতে কৃষক সমস্যায় পড়লেও শস্যের বরাদ্দে ভাগ বসিয়ে ফায়দা লুটছেন মাছচাষিরা। কৃষি বিভাগের দাবি শস্যের জন্য বরাদ্দ সারের একটি বড় অংশ মাছচাষে ব্যবহার হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের দাবি মাছচাষের জন্য সার ব্যবহার করা হয়। তবে দফতর থেকে কৃষি বিভাগকে চাহিদা দেওয়া হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, মাছচাষের জন্য সারের আলাদা বরাদ্দ না থাকলেও প্রতি মাসে বিপুল পরিমান সার সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে পরিমান সার মাছচাষে ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে অনায়াসে কৃষকদের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগমারায় মোট দুই হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে মাছচাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে একই পরিমান জমিতে অতিরিক্ত মাছচাষ হয়। মাছচাষে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে ইউরিয়া, টিএসসি ও ডিএপি সার ব্যবহার করে থাকেন মাছচাষিরা। নিয়মিত সার ব্যবহার হয়ে থাকে জলাশয়ে। প্রাকৃতিক খাবার তৈরি, পানির তাপমাত্রা ধরে রাখা ও অ্যামেনিয়া তৈরিতে কাজ করে সার। মাছচাষের জন্য সার ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ সারের একটি অংশ ব্যবহার হচ্ছে মাছচাষে। ফলে সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে কৃষিকাজে। মৎস্য বিভাগের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ না থাকার কারণে তারা কৃষিবিভাগে ভাগ বসাচ্ছে।
মৎস্য ও কৃষিবিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি রবি মৌসুমে গত অক্টোবর মাসে শুধুমাত্র পুকুরে মাছচাষে ব্যবহার করা হয়েছে ১৭০ মেট্টিকটন সার। এর মধ্যে ইউরিয়া ৭৫ মেট্রিকটন, টিএসপি ৫৫ মেট্রিকটন ও ডিএপি ৪০ মেট্রিকটন। তবে বিলে মাছ চাষে আরও ১৫০ মেট্রিকটন সার ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই মাসে প্রায় সাড়ে তিনশ মেট্টিকটন সার মাছচাষে ব্যবহার করেছেন চাষিরা। মাছের জন্য ব্যবহার করা এসব সার দিয়ে প্রায় ১৬ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, মাছচাষে সার ব্যবহারের কারণে চলতি রবি মৌসুমে কিছুটা চাপ বেড়েছে। মাছচাষের জন্য আলাদা সার বরাদ্দ পেলে শস্য চাষে সারের চাপ কমে যেত।
অনুসন্ধান, মাছচাষি ও পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুকুর এবং বিলে মাছের জন্য যে পরিমান সার ব্যবহার করা হয় তা স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা হয়। পরিবেশকদের কাছ থেকে সার কিনে পুকুরে ব্যবহার করা হয়। এজন্য তাদের কোনো বেগ পেতে হয় না। আবদুল হাকিম, মনিরুল ইসলাম, আবদুল জব্বার, আবদুল মজিদসহ ৩০-৩৫জন মৎস্যচাষি জানান, তারা পরিবেশকদের কাছ থেকে বাজার দরের চেয়ে একটু বেশি দামে সার কিনে মাছচাষে ব্যবহার করে থাকেন। তবে তাদের কিছু জমাট বাধা সার দেওয়া হয় যা ব্যবহারে কোনো সমস্যা হয় না। তারা নিয়মিত ও বেশি দামে সার কেনার কারণে পরিবেশকেরা তাদের সার সরবরাহ করতে কোনো ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করেন না।
বাগমারা উপজেলার বিসিআইসি ডিলার আক্তারুল আলম বলেন, তারা নিয়মিত মাছচাষিদের কাছে সার বিক্রি করে থাকেন। তাদের কাছে বিক্রি করা যাবে না এমন নির্দেশনা নেই। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল করিম বলেন, ভালোভাবে মাছচাষের জন্য সার অপরিহার্য। কৃষি অফিস থেকে তাদের কাছ থেকে চাহিদা নেওয়া হয়। এরপর মৎস্যচাষিরা সারগুলো সংগ্রহ করে ব্যবহার করেন বলে দাবি করেন তিনি।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২২ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ