হিজাব নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিভক্ত রায়

সানশাইন ডেস্ক : ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব পরার অধিকার নিয়ে এক মামলায় বিভক্ত রায় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। মামলায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। নিয়মানুযায়ী এখন মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের আওতায় যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের এক রায়ের পর কর্ণাটক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ জানিয়েছেন, রায় খণ্ডিত। কাজেই রাজ্যের বিদ্যালয়ে হিজাব নিষিদ্ধই থাকছে।
গত বছরের (২০২১) ডিসেম্বরের শেষ দিকে কর্ণাটক রাজ্যের অনেক স্কুল ও কলেজে হিজাব পরা নিয়ে মুসলিম শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি কলেজে হিজাব পরা মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে অংশ নিতে বাধা দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ইউনিফর্মের বাইরে কাউকে অন্য কোনো পোশাক পরতে দেয়া হবে না।
কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে বিতর্ক আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। অচিরেই কর্ণাটক ছাড়িয়ে তা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর অনুসারীরা গেরুয়া উত্তরীয় ও চাদর পরতে শুরু করেন। হিজাবের পক্ষে–বিপক্ষে শুরু হয় আন্দোলন। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
বিতর্কের মধ্যেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ে পোশাকসংক্রান্ত নির্দেশ জারি করে কর্ণাটকের বিজেপি সরকার। কর্ণাটক শিক্ষা আইন ১৯৮৩-এর কথা উল্লেখ করে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেয়া পোশাক পরেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে হবে।
আরও বলা হয়, যেখানে পোশাকবিধি আছে, সেখানে তা মানতে হবে। যেখানে নেই, সেখানে এমন কিছু পরা যাবে না, যাতে বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ভারসাম্য নষ্ট হয়। রাজ্য সরকারের দাবি, ওই নির্দেশ সাম্প্রদায়িক নয়, ধর্মনিরপেক্ষ। রাজ্য সরকার বিদ্যালয়ে হিজাবের মতো গেরুয়া উত্তরীয়ও নিষিদ্ধ করে।
সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন মুসলিম ছাত্রীরা। গত ১৫ মার্চ কর্ণাটক হাইকোর্ট সেই মামলা খারিজ করে সরকারি নির্দেশ বহাল রাখেন। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, হিজাব পরা ইসলামে অপরিহার্য নয়। হিজাব পরাকে ধর্মাচরণের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসেবে দেখা ঠিক নয়।
এরপর সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন মুসলমান ছাত্রীরা। শুনানির সময় এ কথাও বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞা মুসলমান নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মুসলমান নারীদের মধ্যে শিক্ষার যে বিকাশ ঘটছে, এই নির্দেশ তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অনেকেই পড়া শেষ না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাচ্ছেন।
কর্ণাটক হাইকোর্টে মুসলমান ছাত্রীরা এই আবেদনও করেছিলেন, যারা হিজাব পরতে আগ্রহী, তাদের ইউনিফর্মের সঙ্গে মানানসই হিজাব পরার অনুমতি দেয়া হোক। রাজ্য সরকার তা মানেনি। অবশ্য হাইকোর্ট সেই বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
সুপ্রিম কোর্টে মুসলিম ছাত্রীদের আবেদনের ধারাবাহিক শুনানির পর গত ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে নিজেদের রায় সংরক্ষিত রেখেছিলেন বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ।
বিচারপতি হেমন্ত কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের পক্ষে মত জানিয়ে আবেদন খারিজ করে দিলেও সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার উল্লেখ করে বিচারপতি ধুলিয়া মুসলিম ছাত্রীদের আবেদনের যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছেন। হিজাব পরার ব্যক্তিগত অধিকারকেও স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২২ | সময়: ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর