বরেন্দ্র অঞ্চলে শীতকালীন হাইব্রীড টমেটো বাজারে,ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক 

মুক্তার হোসেন,গোদাগাড়ী ;

সবচেয়ে বেশি শীতকালীন টমেটো উৎপাদন হয় বরেন্দ্র অঞ্চল গোদাগাড়ী উপজেলায়। প্রায় দুই দশক ধরে এই উপজেলায় টমেটো চাষ হচ্ছে। প্রতি মৌসুমেই বিপুল পরিমাণ টমেটো উৎপন্ন হয় এখানে। কৃষি বিভাগ বলছে, গোদা গাড়ীর কয়েক হাজার চাষী শুধু টমেটো চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।চলতি মৌসুমে টমেটোর আশানুরূপ ফলন হওয়ায় আশা করছেন চাষিরা। ইতিমধ্যে উৎপাদিত টমেটো বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবে দাম ভালো পাওয়ায় রাজশাহীতে অপরিপক্ব টমেটো ইথোফোন-রাইপেন জাতীয় কেমিক্যাল হরমোন দিয়ে পাকানো হচ্ছে। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে টমোটোই ব্যবহুত হরমোন ক্ষতিকর নয়।সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইটাহার, ললত্রি, পানিহার, জগপুর, বিড়ইল গ্রামে গিয়ে ইথোফোন-রাইপেন দিয়ে টমেটো পাকানোর সত্যতা পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা জানায়, বর্তমানে টমেটো প্রতি মণ ২ হাজার থেকে ২২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে চাহিদাও ভালো আছে। চাষিরা বলছেন, কিছু দিন পর এই দাম আর দাম থাকবে না। তাই ছোট অবস্থায় টমেটো বিক্রি করছেন তারা । গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। গত বছর গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছিল। জেলার গোদাগাড়ীতে সব চেয়ে বেশি টমেটো চাষ হয়। আর রাজশাহী জেলাজুড়ে ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয়।এর মধ্যে তিন জাতের টমেটো বেশি চাষ হয়।

 

 

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব টমেটো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে । ফলে টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে  স্থানীয়  কৃষি অফিস । সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে আউশ ধান কেটে নেওয়ার পর টমেটো চাষ শুরু হয়। এটা মূলত শীত ও বর্ষাকালীন টমেটো। যার সবগুলো হাইব্রিড। অন্য যেকোনো ফসলের তুলনায় টমেটো চাষ লাভজনক। এক বিঘায় ৬০-৭০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ ১ হাজার টাকা করে হলেও ৬০-৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। যা ধান কিংবা অন্য ফসলে সম্ভব না।চাষি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমি থেকে টমেটো তুলে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। ২৪ ঘণ্টায় দু’বার ইথোফোন বা রাইপেন ছিটানো হয়। এরপর তা শুকনো কাঁথা ও ধানের নাড়া বা কুটো দিয়ে জাগ দেওয়া হয়। এতে টমেটো দ্রুত লাল হয়ে যায়। স্থানীয় চাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘টমেটো চাষে সুবিধা আছে। ব্যাবসায়ীরা জমির কাছে থেকে টমেটো কিনে নেয়। ফলে হাটে-বাজারে বিক্রির খরচ নেই। অনেক সময় টমেটো চাষের জন্য ব্যবসায়ীরা চাষিদের অগ্রিম টাকাও দিয়ে থাকে।

 

 

আবার পুরো জমির টমেটো কিনে নেয় ব্যবসায়ীরা। টমেটো উঠার শুরু থেকেই ভালো দাম পাওয়া যায়। উপজেলার মহিশালবাড়ীর কৃষক সাদ্দাম হোসেন দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। গাছে টমেটো আসার আগ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার টাকা বেশি। আরও ৫ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি। বিড়ইল গ্রামের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, পাকা টমেটো পেতে এখনো এক মাস সময় লাগবে। তখন দাম আরও কমে যাবে। কাঁচা টমেটো কীভাবে পাকান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যেসব পাকা টমেটো দেখবেন সব ওষুধ দিলে পাকানো। তবে এই টমেটোতে তেমন স্বাদ নেই।গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, হরমোন দিয়ে টমেটো পাকানো । এটা খেলে মানবদেহের ক্ষতি হবে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,  এতে ক্ষতিকারক কিছু থাকে না, তারপরও কম মাত্রায় থাকতে পারে। এই হরমোন (ইথোফোন) কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা করা হয়েছে। মূলত: বেশি দাম পাওয়ার জন্য কাঁচা টমেটো বিক্রি করছেন চাষিরা।

 

সানশাইন/তারেক

 


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২২ | সময়: ৮:০৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর