এক সেশনে ১০ উইকেট হারিয়ে ধরাশায়ী অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস ডেস্ক: রবীন্দ্র জাদেজার সোজা বল স্টিভেন স্মিথের ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে ভেঙে দিল স্টাম্প। আনন্দে মেতে উঠলেন ভারতের ক্রিকেটাররা। এরপর একটু থমকে দাঁড়ানো, নো বল! পরের ওভারে স্কট বোল্যান্ডকে এলবিডব্লিউ করে দিলেন মোহাম্মদ শামি। আবার একটু অপেক্ষা, রিভিউ নিলেন যে ব্যাটসম্যান। তবে এবার আর রক্ষা হলো না। আরেকবার ভারতের স্পিন বিষে নীল হলো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং। তিন দিনেই নাগপুর টেস্ট জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল রোহিত শর্মার দল।
স্পিন সহায়ক উইকেটে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম টেস্টে ভারত জিতেছে ইনিংস ও ১৩২ রানে। তৃতীয় দিন শনিবার অস্ট্রেলিয়া এক সেশনেই হারায় ১০ উইকেট। টার্নিং আর নিচু বাউন্সের উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীরা অল আউট হয় স্রেফ ৯১ রানে, যা ভারতের বিপক্ষে তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। এবার ৫ উইকেট নেন অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারি বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার জাদেজার প্রাপ্তি এবার ২টি।
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে ভারত করে ৪০০ রান। সেখানে ব্যাট হাতেও বড় অবদান রাখেন জাদেজা। চোট কাটিয়ে প্রায় ছয় মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচে ১৮৫ বলে তিনি খেলেন ৭০ রানের ইনিংস। ৯ নম্বরে নেমে ১৭৪ বলে ৮৫ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন আকসার প্যাটেল। ৪৭ বলে ৩৭ রান করেন পেসার শামি। অধিনায়ক রোহিত সেঞ্চুরি উপহার দেন আগেই।
ব্যাটসম্যানদের হতাশার মাঝে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বল হাতে আলো ছড়ান টড মাফি। অভিষিক্ত তরুণ অফ স্পিনার ১২৪ রানে নেন ৭ উইকেট, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকে যা ষষ্ঠ সেরা বোলিং। ভারত তৃতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করে ৭ উইকেটে ৩২১ রান নিয়ে। আগের দিন ফিফটি করা জাদেজা ও আকসারের জুটি এ দিন আর বেশিদূর এগোতে পারেনি। আগের দিন পাঁচ উইকেট পূর্ণ করা মাফি বোল্ড করে দেন জাদেজাকে। ভাঙে ৮৮ রানের জুটি।
শামির সঙ্গে এরপর আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ (৫২) জুটি উপহার দেন আকসার। মাফির সপ্তম শিকারে পরিণত হওয়ার আগে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩৭ রানের ইনিংসটি খেলেন শামি। দলীয় স্কোর চারশ স্পর্শ করার পরই প্যাট কামিন্সের বলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বোল্ড হন আকসার। তার ৮৪ রানের ইনিংসটি ৯ নম্বরে নেমে ভারতের হয়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ। লাঞ্চ বিরতির পর অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে ২২৩ রানে পিছিয়ে থেকে। শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারায় তারা।
ইনিংসের দ্বিতীয় আর নিজের প্রথম ওভারে উসমান খাওয়াজাকে দিয়ে শিকার ধরা শুরু করেন অশ্বিন। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করে স্লিপে ধরা পড়েন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। জাদেজার নিচু হওয়া বলে এলবিডব্লিউ হন টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান মার্নাস লাবুশেন। বিরাট কোহলির ক্যাচ মিসে জীবন পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ডেভিড ওয়ার্নার। ১০ রানে তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন অশ্বিন।
অভিজ্ঞ এই অফ স্পিনার নিজের পরের তিন ওভারে ম্যাট রেনশ, পিটার হ্যান্ডসকম ও অ্যালেক্স কেয়ারিকেও এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে ফেলে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন, ক্যারিয়ারে ৩১তম বারের মতো। কামিন্স আর মাফিও এরপর টিকতে পারেননি। প্রথম ৮ উইকেটের সবগুলিই স্পিনারদের দখলে। আক্রমণে ফিরে শামি বোল্ড করে দেন ন্যাথান লায়নকে। এরপর জাদেজার নো বলে (ওভার স্টেপিং) স্মিথের বেঁচে যাওয়া, শামির আরেকটি উইকেট এবং ভারতের জয়োল্লাস।
স্মিথের ৫১ বলে ২৫ রান অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস সর্বোচ্চ। দুই অঙ্কে যেতে পারেন আর কেবল তিন জন। দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন জাদেজা। ঘরের মাঠে সবশেষ ১৫ টেস্ট সিরিজেই জেতা ভারত আরেকটির পথে এগিয়ে গেল এক ধাপ। ২০০৪ সালের পর থেকে ভারতে সিরিজ জিততে না পারা অস্ট্রেলিয়া বড় ধাক্কা এবার খেল শুরুতেই। আগামী শুক্রবার দিল্লিতে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট।
এক সেশনে ১০ উইকেট


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ