সর্বশেষ সংবাদ :

নতুন ধানে নবান্ন হলো বরেন্দ্রে

রাবি প্রতিনিধি : সবুজ ফসলের মাঠে সোনালী রঙের আভা ছড়িয়ে প্রকৃতিতে চলছে এখন হেমন্তকাল। হেমন্তের অগ্রহায়ন মাসে দেশের গ্রামাঞ্চলে মাঠের সোনালী ফসল ঘরে তোলার ধুম পড়ে। ঘরে ঘরে চলে নবান্ন উৎসব। যদিও কালের আবর্তে বর্তমানে দেশের সংস্কৃতি থেকে হারাতে বসেছে এই উৎসবটি। তবে সেই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নবান্ন উৎসব উদ্যাপন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এগ্রোনমী অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগ।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজনে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, পিঠা উৎসব, ধানকাটা উৎসব, বরণ, বিদায়, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিন সকাল ১০টায় রঙিন বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্য। অগ্রহায়ণের শুরুতেই এপার বাংলা ও ওপার বাংলাতে চলে উৎসবের নানা আয়োজন। নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এ উৎসব। বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরও গাঢ় করার উৎসব। বঙ্গবন্ধু কৃষি ও কৃষককে ভালোবাসতেন। সেই কৃষিকে এভাবে স্মরণ করে রাখতে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক। এসময় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, কৃষি অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক আব্দুল আলিমসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নবান্ন উৎসবকে ঘিরে আয়োজিত পিঠা উৎসবে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কৃষি অনুষদ ভবনের সামেন আয়োজিত এই পিঠা উৎসবে গিয়ে দেখা যায়, নানা ধরনের পিঠার সমাহার নিয়ে বসেছে ১০ টি স্টল। স্টলগুলোর মধ্যে ছিল মৌচাক পিঠা উৎসব, শাশুড়ি মায়ের দোয়া, চিতই স্পেশাল, পিঠা পার্বণে অরণ্য-১৯, আরশীনগর, নবান্নের পিঠা সরোবর, পিঠাই ঘর, পিঠাপুলি।
আর এই স্টলগুলোতে বিক্রি করা পিঠাগুলোর মধ্যে ছিল দুধপুলি পিঠা, চন্দ্র পুলি, সুজির কাটলি বরফি, জামাই পিঠা, চাঁদ পুলি, পাটি সাপটা, গোলাপ ফুল পিঠা, চিকেন ফ্রাই, লবঙ্গ পিঠা, শামুল পিঠা, রুপালি পিঠা, বুটের বরফি, মোহন ভোগ, ডিম সুন্দরী পিঠা, মাছের পিঠা, গাজরের হালুয়াম ডিমপুর, গোলাপ, আরশি নগর, ঝাল-মিষ্টি, হৃদয়হরণ পিঠা, শীম ফুল পিঠা, সূর্যমুখী, পাকোয়ান পিঠা, শামুক পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসে ভরা সবজি পিঠা, খিরপুলিসহ প্রায় ১০০ পদের পিঠা। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয় এসব পিঠা।
নবান্ন উৎসবের সার্বিক বিষয়ে কৃষি অনুষদের ডিন ও এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলিম বলেন, নবান্ন উৎসবের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই। এটি ঋতু নির্ভর। আমরা প্রতিবছরের মতো এবারো নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছি। আমাদের সকাল থেকে পিঠা উৎসব শুরু হয়েছে। বিকেলে আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আমরা বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের এই কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সহযোগিতা করেছে। ভবিষ্যতে এই ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর মাঠে মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ, বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। ফলন যেমনই হোক, কৃষকের মুখে ধানকাটার গান মনে করিয়ে দেয় নবান্ন উৎসবের কথা। নতুন ধানের পিঠাপুলি দিয়ে নওগাঁয় পালন করা হচ্ছে নবান্ন উৎসব। প্রতি বছরের মতো গতকাল ছিল পহেলা অগ্রহায়ণে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নওগাঁয় দিনব্যাপী এই নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিন সকাল থেকেই সমবায় চত্বরে সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ জড়ো হন। নেচে গেয়ে লোকায়ত জীবন ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে তুলে ধরা হচ্ছে গান, নৃত্য ও কবিতার ভাষায় ফসলকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা। শিল্পীদের কণ্ঠে কখনও একক, কখনো দলীয় গান। কখনও আবার গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য। নানা পরিবেশনা ছাড়াও উৎসবে আগতদের জন্য বসেছে পিঠাপুলির মেলা।
এ উপলক্ষে বুধবার সকালে শহরের সমবায় চত্বরে এর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ এর আয়োজন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরীফুল ইসলাম খান, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারন সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেনসহ অন্যান্যরা।
জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারন সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি জাতি-ধর্ম-বর্ণকে উপেক্ষা করে নবান্নকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরও গাঢ় করার উৎসব। আমরা প্রতিবছর পহেলা অগ্রহায়ণে এই দিনে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকি। আগামীতেও এই আয়োজন করা হবে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ | সময়: ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ