সর্বশেষ সংবাদ :

সৈনিক লীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিদ্যালয়ের জায়গায় একাধিক দোকারঘর নির্মাণ

 

তানোর প্রতিনিধিঃ

রাজশাহীর তানোরে এক উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গায় সৈনিক লীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বেশ কয়েকটি ইটের নতুন পাকা দোকারঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর আগেও সেখানে একটি দোকান ও একটি গুদামঘর নির্মাণের চেস্টা করা হয়। কিন্তু তৎকালিন ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ওই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি আবারো ওই জায়গায় প্রভাবশালীরা দোকানঘর নির্মাণ শুরু করে। এব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের নিকট অবৈধ দোকানঘর নির্মাণ বন্ধের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দায়ে করেন।

 

ফলে গত ২৫ অক্টোবর সরজমিনে তদন্ত করেন ইউএনও। এরপরও নির্মাণ কাজ দ্রুত চালিয়ে যান প্রভাবশালীরা। ফলে নিরুপাই হয়ে সম্প্রতি ১৩ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। এরপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দোকারঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়। অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নে অবস্থিত নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের সামনে খেলার মাঠ, পিছনে নারায়নপুর ও কালনা গ্রামে যাতায়াত বা প্রবেশ করা সরকারি রাস্তা। সাইডে রয়েছে নারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুটি বিদ্যালয়ের জায়গা ও খেলার মাঠ নিয়ে ২ একর ১০ শতাংশ জমির আরএস রেকর্ডীয় মালিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপরও বিদ্যালয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে এলাকার প্রভাবশালীরা ৯টি পাকা দোকারঘর নির্মাণ করেন।

 

 

এরা হলেন, উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল, খলিল, মইফুল, সিদ্দিকুর, আনসার, শাহিন, জাহাঙ্গীর, এরাজ ও আয়ুব আলী। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিএনপি ও জামায়তের নেতাকর্মী ও সমর্থক। আর মইফুল সৈনিকলীগ নেতা। মূলত এই মইফুলের নেতৃত্বেই বিদ্যালয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন বিএনপি-জামায়তের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এঘটনায় নারায়নপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন বাদি হয়ে সম্প্রতি ২৫ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও সরজমিনে ঘটনাস্থলে তদন্ত করে গত ১৩ নভেম্বর তানোর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আমানত আলীকে বিদ্যালয় জরিপের নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনো জরিপ করা হয়নি। ফলে স্থানীয় অভিভাবক ছাড়াও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাঝে চরমক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এনিয়ে সৈনিক লীগ নেতা মইফুল ইসলাম বলেন, তারা স্কুলের জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করেননি। সরকারি রাস্তার পাশে তিনি ছাড়াও অনেকে দীর্ঘদিন ধরে দোকানঘর নির্মাণ করছেন। এখন কাজ বন্ধ আছে। তবে, ইউএনও’র নির্দেশে তার দলীয় সাইনবোর্ড তুলে নেয়া হয়েছে।

 

 

এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন জানান, গ্রামের প্রভাবশালীরা যেখানে দোকানঘরগুলো নির্মাণ করেছেন, ওই জায়গা তাঁর বিদ্যালয়ের নামে আরএস রেকর্ডীয় সম্পত্তি। বিদ্যালয়ের পাশে দক্ষিণে সরকারি রাস্তা। ওই রাস্তা থেকে শুরু তাঁর নিজস্ব জমি। শুধু গায়ের জোরে ও পেশিশক্তির বলে সেখানে তারা সৈনিক লীগের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দোকানঘর নির্মাণ করে। দুয়েকজন ছাড়া তারা সবাই বিএনপি-জামায়াতের লোক।

 

 

তিনি আরও জানান, ওখানে দোকানঘর নির্মাণ করায় শিক্ষার পরিবেশ চরম ভাবে নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও বখাটেরা দিনের বেলায় এসব দোকানে ক্যারাম বোর্ড খেলাসহ ছাত্রীদের নানাভাবে উক্ত্যাক্ত করছে। নিষেধ করা হলে উল্টো হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব ঘর নির্মাণের জন্য ক্লাস রুমের জানালা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিজ্ঞান বিভাগে বাস্তব সম্মত শিক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আবার খলিল ও মইফুল বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের ব্যানার সাটিয়ে দাপটের সাথে বলছে দলের নির্দেশে ঘর করা হয়েছে। এজন্য নিরুপাই হয়ে তিনি ইউএনও স্যারকে অভিযোগ দিয়েছেন বলে প্রধান শিক্ষক। এবিষয়ে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আমানত আলী বলেন, গত পরশু ইউএনও স্যার তাকে ওই উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গা জরিপ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। বর্তমানে তিনি অফিসের কাছে ব্যস্ত আছেন। দুয়েক সপ্তার মধ্যে ওই বিদ্যালয় ও পাশের সরকারি রাস্তা জরিপ করে প্রতিবেদন প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি। তবে, এবিষয়ে তানোর থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়ার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।

 

 

এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ওই উ”চবিদ্যায়ের জায়গা জবর-দখল করে দোকানঘর নির্মাণ ব্যাপারে সরেজমিন ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন তিনি। এরপরও ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারকে রাস্তা ও দুটি বিদ্যালয় জরিপ প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। প্রতিবেদন পেলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান ইউএনও।

 

 

 

সানশাইন/টিএ


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২২ | সময়: ৯:১০ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine