৪ ম্যাচে ৫৪ ডট বল, আরও জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় তাসকিন

স্পোর্টস ডেস্ক: অ্যাডিলেইড ওভালের প্রেসবক্ম লাগোয়া ডাইনিংয়ে পাওয়া গেল সাইমন ডুলকে। অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান ম্যাচে ধারাভাষ্য দেওয়ার ফাঁকে হাঁটাহাঁটি করছিলেন নিউ জিল্যান্ডের সাবেক এই পেসার। সাক্ষাৎকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন হাসিমুখে। মিনিট দুয়েক টুকটাক কথা অবশ্য বললেন আড্ডার ছলে। সেখানেই তার উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল তাসকিন আহমেদকে নিয়ে, “কী দারুণ এক বোলারে পরিণত হয়েছে সে! প্রায় কমপ্লিট ফাস্ট বোলার মনে হচ্ছে তাকে। তোমাদের জন্য দারুণ এক সম্পদ, তাকে স্রেফ ফিট রাখতে হবে তোমাদের।”
শুধু সাইমন ডুল নয়, এবারের বিশ্বকাপে তাসকিনকে দেখে মুগ্ধ হওয়ার তালিকাটা বেশ লম্বাই হওয়ার কথা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বদলে যাওয়া তাসকিনের জয়গান তো গাওয়া হচ্ছে বেশ অনেক দিন ধরেই। এখন বিশ্ব ক্রিকেটের অনেকের কণ্ঠেও সেই সুর। বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম করার পুরস্কার!
বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম তিনি আগেও করেছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত বোলিং করেন। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খারাপ করেননি। তবে এবার তার পারফরম্যান্স নজরকাড়া। এবার তিনি পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন। এবার তিনি জয়ের নায়ক হচ্ছেন।
৪ ম্যাচে এখনও পর্যন্ত তার উইকেট ৮টি। বাংলাদেশের দুই জয়েই তিনি ম্যান অব দা ম্যাচ। কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটিই তার ভালো কাটেনি। সেটিতেও প্রথম ওভারে উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন। যে ম্যাচে উইকেট পাননি, সেরা বোলিং করেছেন সম্ভবত ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচেই। ৪ ওভারের টানা স্পেলে রান দেন মাত্র ১৫। লেকেশ রাহুল, বিরাট কোহলির মতো ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিয়ে ছাড়েন। ক্যাচ না পড়লে রোহিত শর্মার উইকেটও পেতেন।
একটি জায়গায় এখনও পর্যন্ত তিনি আসরের সব বোলারের ওপরে। ৪ ম্যাচে ১৫ ওভার বল করেছেন তিনি, ৫৪ বলেই কোনো রান দেননি। আসরের মূল পর্বে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডট বল করেছেন তিনিই। তাসকিনের উন্নতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ আসলে এই পরিসংখ্যান, যেখানে ফুটে উঠছে তার নিয়ন্ত্রণ ও ধারাবাহিকতা।
গতি আর আগ্রাসন তার বোলিংয়ে ছিল বরাবরই। ঘাটতি ছিল বোলিংয়ের শৃঙ্খলায়। এখানেই তার উন্নতি সবচেয়ে বেশি। এখন তিনি অনেক গোছানো। প্রথম বল থেকেই সুর ধরে সেই লয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। এখন তিনি অনেক পরিণত।
একটা সময় ছিল, যখন তিনি প্রতিটি বলেই ব্যাটসম্যানকে গুঁড়িয়ে দিতে চাইতেন। প্রতিপক্ষকে ভেঙেচূড়ে ফেলতে চাইতেন। সেসব দিন এখন অতীত। ম্যাচের পরিস্থিতি, ব্যাটসম্যান, উইকেটের অবস্থা বুঝে বল করেন। বোলিংয়েই ছাপ পড়ে, এখন তিনি কতটা বদলে গেছেন। বাজে দিন অবশ্য এখনও আসে। কখনও কখনও খেই হারান বটে। তবে সেটা তো ক্রিকেটেরই নিয়ম। কিন্তু তার সার্বিক ধারাবাহিকতা এখন দৃশ্যমান। বিশ্বমঞ্চেও তা দেখিয়ে চলেছেন। তার পারফরম্যান্সে যেমন, তেমনি তার কথায়ও পরিষ্কার, এখন তিনি কতটা পরিণত।
“প্রত্যেকটি ম্যাচে আমি আমার শক্তির জায়গায় ফোকাস করছি। সবাই (সব বোলার) ভালো ব্যাটসম্যানের বিপরীতে বোলিং করছে। আমি নিজের শক্তির জায়গায় আস্থা রাখছি। আমি বিশ্বাস করি, আমার সামর্থ্য আছে যে কোনো ব্যাটসম্যানের সামনে ভালো কিছু বোলিং করার। বেশি কিছু চিন্তা না করে প্রক্রিয়া ধরে এগোচ্ছি, উইকেটের আচরণ কেমন, তখনকার পরিস্থিতি ঠিকঠাক পড়ে সেভাবে বল করার চেষ্টা করছি।”
বদলে যাওয়া এই তাসকিনের মানসিকতায় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো ব্যাপার, তৃপ্ত না হওয়া। এখন আর তিনি পিছু ফিরে তাকাতে চান না, থমকে যেতে চান না। ক্রমাগত ছুটতে চান উন্নতির পথ ধরে। প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যেতে চান নিজেকে। দিন কয়েক আগে বলেছিলেন, শুধু ভালো বোলারই নয়, হতে চান পরিপূর্ণ এক ক্রিকেটার। নিজের সেই তাড়নার শোনালেন তিনি আরও একবার।
“আসলে প্রত্যেকটা ম্যাচই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট অনেক সময় পাব, অনেক সময় পাব না। কিন্তু আমার প্রক্রিয়ায় আমি এগোচ্ছি। আমার লক্ষ্য নিজেকে প্রতিটি ম্যাচ, প্রতিটি দিন কার্যকর অনুশীলন করে উন্নতি করা। আমি চাই একজন পরিপূর্ণ খেলোয়াড় হতে, সব দিক থেকেই আরও উন্নতি করে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। এটাই আমার লক্ষ্য।”


প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ | সময়: ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ