সর্বশেষ সংবাদ :

টায়ার পুড়িয়ে চলছে দাহ্য পদার্থ উৎপাদন

মওদুদ আহম্মেদ, আক্কেলপুর: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ফসলী জমি নষ্ট করে অনুমোদন না নিয়ে টায়ার ও কাঠ পুড়িয়ে দাহ্য পদার্থ (ডিজেল জাতীয় জ¦ালানী তেল) উপাদন করছে গ্রীন পাইরোলাইসিস নামক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন হয়েছে উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের কয়াশোবলা মাঠে।
তিলকপুর ইউনিয়নের বুড়াপুকুর গ্রামের পশ্চিমে কয়াশোবলা মৌজার ফসলী জমির মাঠে প্রায় ২৫ কাঠা জমির উপর গ্রীন পাইরোলাইসিস নামে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন পাশর্^বর্তী নওগাঁ জেলার শ্রীধরপুর গ্রামের মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি।
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর পূর্বে ফসলী জমির মাঠে গ্রীন পাইরোলাইসিস নামক প্রতিষ্ঠানাটি ৬২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্থাপনের কাজ শুরু হয়। বাণিজ্যিকভাবে টায়ার পুড়িয়ে দাহ্য পদার্থ (ডিজেল জাতীয় জ¦ালানী তেল) উৎপাদন করছে প্রায় ২ মাস থেকে।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৮ জন শ্রমিক দিন ও রাতে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটি দিনে টায়ার ও কাঠ সংগ্রহ করে। জ¦ালানী তেল উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করেন রাতের মধ্যভাগ থেকে ভোর পর্যন্ত। তাদের দাবী ৭ টন টায়ার পুড়িয়ে ১৫’শ থেকে ১৮’শ লিটার ডিজেল জাতীয় তেল উৎপাদন করেন। যা প্রতি লিটার বিক্রি হয় ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।
তবে প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমতি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন অনুমোদন নেই।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক মেহেদী হাসান বলেন, ‘এখানে আমরা টায়ার পুড়িয়ে জ¦ালানি তেল উৎপাদন করে থাকি। আমাদের উৎপাদিত জ¦ালানি বিদ্যুৎ অফিসের জ¦ালানি ও ভারী যানবাহন চালানোর জন্য ব্যবহার হয়। আমার এই কার্যক্রম থেকে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়না। আমি অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি, আশা করি শিঘ্রই অনুমোদন পেয়ে যাব’।
কয়াশোবলা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘টায়ার পুড়িয়ে জ¦ালানী তেল উৎপাদন করায় আমাদের ফসলের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। আমন ধানের উপড় ছাই পড়ছে, তাছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পদার্থ পানির সাথে মিশলে ধানের ক্ষতি হবে। টায়ারের ধোঁয়ায় প্রচন্ড গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করাও কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি অফিস বরাবর গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে’।
তিলকপুর ইউপি চেয়াম্যান সেলিম মাহবুব সজল বলেন, ‘ওই কারখানা স্থাপনে আমার কাছে ট্রেড লাইসেন্স নিতে এসেছেল। পরিবেশ ও ফসলের ক্ষতি হবে ধারনা করে ট্রেড লাইসেন্স দেয়নি। যদি তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায় তখন ভেবে দেখব’।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সাজিল-ই-জামান বলেন, ‘পোড়া টায়ার থেকে এক ধরণের সিএফসি গ্যাস উৎপন্ন হয়। যা মানব দেহে ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, মুত্র থলির ক্যান্সার সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এমনকি প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে এবং স্নায়ু তন্ত্রকে আক্রান্ত করে নানা ধরণের দূরারোগ্য ব্যধি সৃষ্টি করতে পারে’।
পরিবেশ অধিদপ্তর জয়পুরহাট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন জানান, ‘গ্রীন পাইরোলাইসিস নামে কোন প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেনি। টায়ার পুড়িয়ে জ¦ালানি তেল উৎপাদন পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকী। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
ফায়ার সার্ভিস বগুড়ার পরিদর্শক পুলক কুমার গোস্বামী নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রীন পাইরোলাইসিস নামের কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের নিকট আবেদন করেনি। এ ধরণের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি মারাত্মক রকমের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে’।
বিষ্ফোরক পরিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের পরিদর্শক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, ‘এধরণের কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে রিসাইক্লিং প্লান্ট বলা হয়। যেহেতু তারা পেট্রোলিয়াম জাতীয় দাহ্য পদার্থ উৎপাদন করছে সেহেতু সেখানে বড় দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এই নামীয় কোন প্রতিষ্ঠানের আবেদন আমাদের নিকট আসেনি’।
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এ ধরণের প্রতিষ্ঠান কোন ভাবেই চলতে দেওয়া হবেনা। এটি পরিবেশে ও ফসলের জন্য মারাত্মক হুমকী। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২২ | সময়: ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর