প্রেক্ষাগৃহশূণ্য রাজশাহীতে আবারও বড় পর্দায় সিনেমা

স্টাফ রিপোর্টার : চার বছর পর প্রেক্ষাগৃহশূণ্য রাজশাহী শহরে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় আবারও শুরু হয়েছে বড় পর্দায় চলচ্চিত্র (সিনেমা) প্রদর্শন। মঙ্গলবার রাতে শহরের নবনির্মিত তারকাখচিত গ্র্যান্ড রিভার ভিউ হোটেলের পদ্মা হলরুমে এই চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হয়।
এর প্রথম শোতে দেখানো হয় হালের জনপ্রিয় সিনেমা ‘পরাণ’। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
রিভার ভিউ হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামীকাল পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে এখানে বাণিজ্যিকভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হবে। এর অংশ হিসেবে ২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময়ের জন্য দেখানো হবে ‘পরাণ’ সিনেমাটি। ১ যুগ আগেও রাজশাহী শহর ও এর আশপাশে অন্তত ৬টি প্রেক্ষাগৃহ ছিল। সেগুলোর একটিও নেই এখন।
২০১০ সাল থেকে ব্যবসায়িকভাবে মার খেতে থাকা এই সিনেমা হলগুলো বন্ধ হতে থাকে একে একে। এর শেষটি বন্ধ হয় ৪ বছর আগে; ২০১৮ সালে।
পরের বছরগুলোতে দেশে বাংলা চলচ্চিত্রের ঘুরে দাঁড়ানোর একটি চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। ‘দেবী’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘ফাগুন হাওয়ায়’, ‘যদি একদিন’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘রূপসা নদীর বাঁকে’- এমন কিছু ভালো ছবি দর্শক নন্দিত হয়। চলতি বছর ‘দিন দ্য ডে’, ‘হাওয়া’ এবং ‘পরাণ’ চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের আবার হলমুখী করে।
কিন্তু রাজশাহীতে কোনো পেক্ষাগৃহ অবশিষ্ট না থাকায় শহরের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ঢাকা ও আশেপাশের জেলাগুলোতে ছুটে যেতে দেখা গেছে ছবিগুলো উপভোগের জন্য। বঞ্চিত থেকেছেন বেশিরভাগ দর্শক।
ইতোমধ্যে মো. ইসফা খায়রুল হক শিমুল নামের এক তরুণ ব্যবসায়ী রাজশাহীতে গড়ে তোলেন ৪ তারকাবিশিষ্ট গ্র্যান্ড রিভার ভিউ হোটেল। পরিকল্পনা অনুসারে হোটেলটির সঙ্গে একটি সিনেপ্লেক্সও চালু হওয়ার কথা ছিল।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শিমুল জানান, হোটেলটি চালু হলেও মহামারির পাশাপাশি আর্থিক কারণে সিনেপ্লেক্সটি এখনো চালু করতে পারেননি তিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অনুরোধে বিকল্প ব্যবস্থায় সিনেমা দেখানোর উদ্যোগ নেন তিনি। এর অংশ হিসেবে হোটেলের একটি হলরুমে সিনেমা দেখানোর আয়োজন করেন।
হলরুমটিকে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের উপযোগী করে তুলতে সেখানে বসানো হয় এলইডি মনিটার, উপযোগী সাউন্ড সিস্টেম ও দর্শকের জন্য আসন।
শিমুল বলেন, ‘হলরুমে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থার বিষয়টি আমার সিনেপ্লেক্স স্থাপনের ইচ্ছার প্রকাশ। আমি এখানে নতুন একটি যাত্রা শুরু করলাম। সিনেপ্লেক্স নির্মাণ আমার দ্বারাও হতে পারে। আবার অন্য কেউ আমার দ্বারা অনুপ্রাণিতও হতে পারে।’
শুরুতে হলরুমে দর্শকের বসার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করে এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘আসনগুলোর বেশিরভাগ বসাতে হয়েছে সমান মেঝেতে। বিনোদন নিতে এসে দর্শক হাতলছাড়া চেয়ারে বসবেন- এটাও কাম্য নয়। তবে এটা কেবল শুরু। দ্রুত এখানে ডলবি সাউন্ড সিস্টেম সংযোজন করা হবে।’
শিমুল জানান, ‘পরাণ’ সিনেমার প্রযোজনা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হলরুমটি পছন্দ করেছেন।
প্রযোজনা সংস্থাটির একজন ব্যবস্থাপক মো. আলম বলেন, ‘গত ঈদে সিনেমাটি ১১টি হলে মুক্তি পেয়েছিল। পরে ৬০ টি এবং বর্তমানে ১২০টি সিনেমা হলে চলছে সিনেমাটি। রাজশাহীতেও এটি সফলতা পাবে বলে আশা করা যায়।’
গত রাতে গ্র্যান্ড রিভার ভিউ হোটেলের পদ্মা হলরুমে আরও অনেকের সঙ্গে পরাণ সিনেমাটি দেখেছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ী নুর-ই-ইবনে আলম। তার ভাষ্য, ‘সিনেমা হলের সব পরিবেশই সেখানে আছে। “পরাণ” সিনেমার পুরোটা এখানে বসেই দেখেছি। খুব ভাল লেগেছে।’
বাণিজ্যিক প্রদর্শনী শুরু হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আবার সিনেমাটি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী “পরাণ” দেখার জন্য আবদার করেছিল। কিন্তু তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় বের করতে পারছিলাম না। এখন নিজের শহরেই এটা দেখা যাবে।’


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ