গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১০

সানশাইন ডেস্ক: প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইসরায়েল লক্ষ্য করে শতাধিক রকেট ছোড়ে, তবে এর বেশিরভাগই দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করে। গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফিলিস্তিনি এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর শীর্ষ কমান্ডারসহ অন্তত ১০ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়েও আছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ বলেছেন, দিনকয়েক আগে ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর ফিলিস্তিনি ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ‘তাৎক্ষণিক হুমকির’ পর এই অভিযান চালানো হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, অভিযানের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পিআইজে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে শতাধিক রকেট ছুড়েছে, যার বেশিরভাগই দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম প্রতিহত করেছে। কিন্তু ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে সারা রাত সতর্কতামূলক সাইরেন শোনা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা গাজার জঙ্গিদের বেশ কয়েকটি অবস্থান লক্ষ্য করে ফের রকেট হামলা শুরু করে এবং তা সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ইয়ার লাপিদ বলেন, “তাৎক্ষণিক হুমকি মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল।”
আইডিএফ বলেছে, তাদের হামলা হয়েছে পিআইজে সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোতে। এর মধ্যে গাজার বহুতল ফিলিস্তিন টাওয়ারও আছে, হামলায় বিকট শব্দের পর ভবনটি থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। হামলায় নিহতদের মধ্যে কমান্ডার তাইসির জাবেরিসহ পিআইজের ৪ সদস্য ও ৫ বছর বয়সী একটি মেয়েও আছে বলে জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। আহত হয়েছেন আরও ৫৫ জন, বলেছেন তারা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, হামলায় ‘১৫ জনের মতো জঙ্গি’ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করছে আইডিএফ। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আয়েলেত শাকেদ স্থানীয় একটি গণমাধ্যমকে ‘এবারের সংঘাত দীর্ঘায়িত হতে পারে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইরানের রাজধানী তেহরান সফরকালে পিআইজের সেক্রেটারি জেনারেল জিয়াদ আল নাখালা বলেছেন, “আমরা (ইসরায়েলের) এই আগ্রাসনের জোর প্রতিক্রিয়া দেখাবো, এ লড়াইয়ে আমাদের লোকজন জিতবে। “এবারের যুদ্ধে কোনো লাল দাগ নেই এবং তেল আবিব প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রকেটের আওতায় থাকবে।”
এদিকে গাজা ভূখণ্ডের শাসক হামাস বলেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ‘ঐক্যবদ্ধ’ এবং তারা চুপ করে বসে থাকবে না। সোমবার রাতে ইসরায়েল বাসেম সাদি নামে পিআইজে-র একজনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির পশ্চিম তীরের প্রধান বলে জানা গেছে। ইসরায়েলি আরব ও ফিলিস্তিনিদের একের পর এক হামলায় ১৭ ইসরায়েলি ও দুই ইউক্রেইনীয় নিহত হওয়ার পর চলমান ইসরায়েলি তল্লাশি অভিযানে পশ্চিম তীরের জেনিন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাসেম সাদিকে গ্রেপ্তারের পর পিআইজের হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল গাজার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করে। বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় দক্ষিণ ইসরায়েলের গ্রাম ও শহরগুলোর জীবনযাত্রা অনেকটাই থমকে যায়। ইরান সমর্থিত পিআইজের সদরদপ্তর সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত। এটি গাজায় ক্রিয়াশীল অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অসংখ্য হামলাও চালিয়েছে তারা।
২০১৯ সালের নভেম্বরে ইসরায়েল পিআইজের এক কমান্ডারকে হত্যা করার পর দুইপক্ষে পাঁচ দিনের যুদ্ধও বেধেছিল। তাদের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করায় ওই কমান্ডারকে হত্যা করা হয় বলে সেসময় জানায় ইসরায়েল। সেবারের সহিংসতায় ৩৪ ফিলিস্তিনিরে প্রাণ যায়, আহত হয় শতাধিক। চিকিৎসা লাগে ৬৩ ইসরায়েলিরও। সেবার নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রকেট হামলার প্রস্তুতি নেওয়া কয়েকজনসহ ২৫ জনই জঙ্গি ছিল বলে দাবি ইসরায়েলের।


প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২২ | সময়: ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর