রাজশাহীতে নির্যাতনের পর মাদ্রাসাছাত্রীকে তিনতলা থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীর একটি মহিলা মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে নির্যাতন করে তিনতলা থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে গুরুতর আহত ওই ছাত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে মাদ্রাসার একটি কক্ষে তিন ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে গুরুতর আহত ছাত্রীকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে।
শনিবার বেলা ১১টায় নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার কামাল খাঁ রোডে তাহ্িফজুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসায় এমন ঘটনা ঘটে। আহত ছাত্রীর নাম হালিমা খাতুন (৯)। সে নগরীর শ্রীরামপুর নদীর ধার এলাকার রিকশাচালক মো. বাদশা আলীর মেয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- ২০১৫ সালে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আলী আহম্মেদের ছেলে হাফেজ মো. সানাউল্লাহ ও তার স্ত্রী জাকিয়া পারভীন রাজশাহীতে এসে দুইটি হাফিজিয়া (বালক ও বালিকা) মাদ্রাসা চালু করেন। অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে জান্নাতুল ফিরদাউস হাসিনা হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও তাহ্ফিজুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা নামে এই দুটি মাদ্রাসা পাশাপাশি খুলে বসেন। তিনতলা বিশিষ্ট একটি বাসার টপ ফ্লরের তিনটি ছোট ছোট কক্ষের একটিতে ওই শিক্ষক দম্পতি বসবাস করেন। আর বাকি দুটি কক্ষে ৩৫-৪০ জন ছাত্রীকে কুরআনের হাফেজ বানানোর উদ্দেশ্যে গাদাগাদি করে রাখা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্যাঁতস্যাঁতে নোংড়া দুটি কক্ষে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। সেখানেই তারা পড়ালেখা করে। নেই খোলামেলা জায়গা। বাইরে যাতে কোন ছাত্রী বের হতে না পারে সেজন্য সবসময়ই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ছাত্রীদেরকে মাঝেমধ্যেই নির্যাতন করা হয় বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মাসখানের আগে নির্যাতনের শিকার হালিমা খাতুন মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে চলে যায়। ৩-৪ দিন আগে ছাত্রীর মা রুপা বেগম তাকে মাদ্রাসায় রেখে যায়।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদ্রাসার শিক্ষক জাকিয়া ছাত্রীদের নির্যাতন করতো। নিজের বাসার সব কাজই ওই ছাত্রীদের দিয়ে করিয়ে নিতো। নির্যাতনের কারণে এর আগেও ওই মাদ্রাসা থেকে বেশ কয়েকজন ছাত্রী পালিয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভাটাপাড়া এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ভাগ্নিকে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু দুই মাস পর জানতে পারলাম, আমার ভাগ্নিকে কাজ করিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নির্যাতন করা হয়। বিষয়টি জানার পর ভাগ্নিকে ওই মাদ্রাসা থেকে নিয়ে চলে আসি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি ওই ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘদিন থাকার কারণে মাদ্রাসার শিক্ষক জাকিয়া তাকে নির্যাতন করে জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ফেলে দেয়।’
স্থানায়রা জানান, বেলা ১১টায় ওই ছাত্রী তৃতীয় তলার একটি কক্ষের জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে পড়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনতলা থেকে কয়েকজন মহিলা তড়িঘড়ি করে নেমে এসে ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে মেডিক্যালের দিকে যেতে দেখেছেন তারা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুরুতর আহত ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে ওই শিক্ষকের কক্ষে (মাদ্রাসা কক্ষের পাশের কক্ষ) নিয়ে এসে তালাবদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খুলে দিতে বলে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে পুলিশ ওই কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে দরজা খোলার অনুরোধ জানালেও শিক্ষক জাকিয়া দরজা খুলে দেয়নি। পরে পুলিশ দুপুর ২টার দিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকুর উপস্থিতিতে দরজা ভেঙ্গে আহত ছাত্রীকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুজ্জামান টুকু বলেন, ‘ ঘটনা শোনার পর আমি নিজে সেখানে গিয়ে দরজা খুলতে বলি। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়া হয়নি। পরে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ যেই জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ওই ছাত্রী পড়ে গিয়েছে বলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, কিন্তু কেউ জোরপূর্বক ঠেলে ফেলে না দিলে কোনোভাবেই গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ওই ছাত্রী পড়ে যেতে পারবে না।
তবে মাদ্রাসার শিক্ষক জাকিয়া পারভীনের দাবি, শনিবার বেলা ১১টায় জাকিয়া ছাত্রীদের পড়াচ্ছিলেন। এমন সময় পালানোর জন্য কাউকে না জানিয়েই পাশের রুমের জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হালিমা লাফ দেয়। এতে সে সামান্য আহত হয়। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মাদ্রাসায় নিয়ে আসা হয়।
রাজপাড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মাদ্রাসার এক ছাত্রী তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়েছে। দরজা ভেঙ্গে আহত ছাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২ | সময়: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ