প্রকৃতিতে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল

আবু সাঈদ রনি : হাড় কাঁপানো শীত বিলিয়ে পৌষ বিদায় নিলেও তীব্রতা কমে নি শীতের। বাংলা পঞ্জিকা মতে অনুষ্ঠান আর সৃষ্টির মাস মাঘের শুরু থেকেই দাপটের সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও হয়েছে বেশ কিছু দিন।
স্বভাবতই রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের কাছে বহুল প্রতীক্ষিত মাস মাঘ। এই মাসের শেষে বরেন্দ্র অঞ্চলের আম বাগানে উঁকি দেয় আমের মুকুল। তবে এবার মাঘের শুরু থেকেই রাজশাহীর অনেক গাছে ফুটতে শুরু করেছে মুকুল। জানান দিচ্ছে আমের আগমনী বার্তা। কোথাও কোথাও গুটিও দেখা দিয়েছে আমের। আবার কোথাও নতুন পাতা গজানো শুরু হয়েছে আম গাছের। খানিকটা ব্যতয় হলেও আগাম জাতের আম গাছগুলোতেই মূলত দেখা মিলেছে মুকুলের।
আম প্রধান এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে আম গাছের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আম গাছ ও মুকুলের যত্নআত্তি নিয়েই বেশির ভাগ সময় কাটে তাদের। গাছের পরিচর্যা নিতেই কুল পায় না চাষিরা। মাঘের শুরুইে আগাম এই মুকুল দেখে আম চাষিদের মনে জ্বলে উঠেছে আশার প্রদীপ।
আগাম মুকুলে আম চাষিরা খুশি হলেও শীত থাকা অবস্থায় আমের মুকুল আসা সুবিধার নয় বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ঘন কুয়াশার কারণে আগেভাগে আসা মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেকাংশ। ফলে ফলনে ক্ষতির সম্মুখীন হয় আম চাষিরা।
রাজশাহী নগরীর হেতেম খাঁ, গৌরহাঙ্গা, লক্ষীপুর, শিরোইল, কোর্ট স্টেশন, ভেড়িপাড়া, মালোপাড়া, কাশিয়াডাঙ্গা, মেহেরচণ্ডি ও পদ্মা আবাসিক এলাকার বেশ কিছু আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। নগরীর বাহিরে জেলার মোহনপুর, বাগমার ও চারঘাটেরও বেশ এলাকায় আম গাছে ফুটতে শুরু করেছে মুকুল। প্রকৃতির বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলের সোনালী রঙের সৌরভ। বাতাসে বইছে মৌ মৌ সুবাস। গুঞ্জন শুরু করেছে মৌমাছি।
বছর ঘুরে আবারও ফোটা আমের মুকুলে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে আমপ্রেমীদের মন। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ জাদুর মতো কাছে টানছে আমপ্রেমীদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় যেন শুরু হয়েছে ভ্রমরের সুর ব্যঞ্জনা। কুয়াশা ঘেরা শীতের স্নিগ্ধতার মাঝেই শোভা ছড়াচ্ছে সোনালি মুকুল। রাস্তায় চলার পথে অনবরত আম গাছের মগডালেই নজর কাড়ছে পথচারীদের। এই অঞ্চলের পথে প্রান্তরে চোখ মেলে তাকালেই সদ্য ফোটা মুকুলের নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ হয় সকলেই।
এদিকে আমের নাম ডাকে পূর্ণ জেলার চারঘাট-বাঘার আম গাছগুলোতেও দেখা দিয়েছে আগাম আমের মুকুল। বেশ কিছু এলাকায় গাছের মগডালগুলো থেকে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফুটে উঠছে আমের সোনালী মুকুল।
এ বিষয়ে বাঘার আহম্মদপুর এলাকার আম চাষি সোহানুর রহমান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা নওগাঁর তুলনায় আমাদের দিকে মুকুল আগেই আসে। এবারও তাই হয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই পুরো দমে মুকুল আসবে। এছাড়াও হার্ভেস্ট করার উপর মুকুল আসা কিছুটা নির্ভর করে। আম যত দ্রুত হার্ভেস্ট করা হয় পরের বার মুকুলও তত দ্রুত আসে।
তিনি আরও বলেন, গত বছরে মুকুলের সময় কচি পাতা বেশি হওয়ায় আমের সংখ্যা অনেক কম ছিল। তবে এবার কচি পাতাটা আগেই আসায় মুকুল আটকার সম্ভাবনা বেশি। এখন আর ঘন কুয়াশা না হলে অধিক ফলন হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
রাজশাহী নগরীর বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর পর এবার রাজশাহীতে তীব্র শীত পড়েছে। তবে মাঘের শেষে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আমের মুকুল আসার কথা থাকলেও বেশ কিছু আম গাছে আগাম মুকুল এসেছে। তিনি আরও বলেন, মাঘে যদি ঘন কুয়াশা স্থায়ী হয় তাহলে মুকুলের ক্ষতি হবে। আর এসব মুকুলের অধিকাংশই ঝরে যাবে। ফলে বাগান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমের ফলনও কম হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও ফল গবেষণাগারের তথ্যমতে, গত মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টরে জমিতে আমের বাগান ছিল। এ বছর বাগানের পরিমাণ কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী ছাড়াও বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জের আশপাশের প্রায় সব জেলায় ক্রমেই বাড়ছে সুবিশাল আম বাগান। লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও ঝুঁকছেন এই খাতে। রাজশাহীর উপজেলাগুলোতে প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে বেশ কিছু নতুন আম বাগান । তাই এবারও আবাদের পরিমাণ কিছুটা বাড়বে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে প্রতি বছরই কিছু আম গাছে আগাম মুকুল আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি। ঘন কুয়াশার কবলে না পড়লে এসব গাছে আগাম ফলন পাওয়া যায়। তবে বৈরী আবহাওয়ায় ফলনে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। এক্ষেত্রে মাঘের শেষে যেসব গাছে মুকুল আসে সেসব মুকুল অধিক স্থায়ী হয়।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন বলেন, তীব্র শীতের মধ্যেই এবার রাজশাহীর বেশ কিছু আম গাছে আগাম মুকুল এসেছে। ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ থাকলে এসব মুকুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। কিন্তু আবহাওয়ার উন্নতি হয়ে তাপমাত্রা একটু বাড়লে তেমন সমস্যা হবে না।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ | সময়: ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর