সর্বশেষ সংবাদ :

যান্ত্রিকতায় হারাচ্ছে প্যাডেল রিক্সা-ভ্যান

সেলিম সানোয়ার পলাশ, প্রেমতলী: যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল ভ্যান গাড়ি ও রিক্সা। যান্ত্রিকতার এ আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশিশক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেকট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন।
পেশী শক্তিকে কাজে না লাগিয়ে যতটা আরাম-আয়েশে কর্ম করা যায় মানুষ এখন সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। ইলেকট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন গুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা।
কোনরকম নাম স্বাক্ষর করা, অল্প শিক্ষিত কিংবা দিনমজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশিরভাগ ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও রিক্সা চালক।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও রিক্সা চালিয়ে যাত্রীসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। অলস মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও রিক্সা বেশি পছন্দের বলে ধারণা করেছেন অনেকেই।
তাই পায়ে প্যাডেলের ভ্যান ও রিক্সর পরিবর্তে মানুষ ঝুকছে যান্ত্রিক এই ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যান ও রিক্সার প্রতি। আর এজন্যই হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল ভ্যান ও রিক্সা যানটি। ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও রিক্সায় চলাচল করতে গিয়ে নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছেন যাত্রীরাই।
দৈনন্দিন দুর্ঘটনা ঘটলেও এর কোন তথ্য পাওয়া যায় না বলে অনেক দুর্ঘটনা অজানা থেকে যায়। এ ব্যাপারে কয়েকজন ভ্যান ও রিক্সা চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও রিক্সা সাধারণ ভ্যান ও রিক্সার চেয়ে গতি বেশি। অথচ চাকা একই ধরনের হওয়ার কারণে প্রয়োজনে গতি কমানোর সময় ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে দূর্ঘটনা ঘটে। কারিগরি ভাবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এবং এর ব্রেক সাধারণ ভ্যান ও রিক্সার মত হওয়ায় গতি বেগ বেশি হলে সামলাতে পারেনা চালকেরা।
এদিকে প্রতিটি ভ্যানে ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিনই বিদ্যুৎ লাগে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ইউনিট। এতে করে খরচ কমাতে অনকে বাড়ীর সংযোগ ব্যাবহার করে।
ভ্যান বা বিক্সার ব্যাটারি চার্জ দিতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় তাতে অনেক পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো যায় বলে বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। এক সময় গোদাগাড়ী উপজেলায় ভ্যানে বা রিক্সায় প্যাডেল ঘুরিয়ে সংসার চলতো শত শত মানুষ।
বর্তমান সময়ে এ উপজেলা জুড়ে প্যাডেল ভ্যান নাই বললেও চলে। আর যে দুই-একটি দেখা যায় সেগুলো হয়তো অল্প দিনের মধ্যে হারিয়ে যাবে যান্ত্রিক ভ্যান ও রিক্সার কাছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার ভ্যানচালক জহরুল ইসলাম বলেন (৬০) অনেক বছর ধরে প্যাডেল ভ্যান চালাই। এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। আগে প্রতিদিন গড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকা আয় করতাম। এখন সারা দিন ভ্যান চালিয়ে চালিয়ে ৩শ থেকে ৪শ টাকা আয় করতে পারিনা। আবার কোন কোন দিন সেটিও জোটে না। মানুষ এখন আর প্যাডেল ভ্যানে উঠতে চায় না। জিনিসের যে দাম তা দিয়ে সংসারই চলে না। আমার অটো ভ্যান কেনার সামর্থ্য নেই বাধ্য হয়ে প্যাডেল ভ্যানেই চালাই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিন যত যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন লাভ থাকলেও রয়েছে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তবে যান্ত্রিক যানবাহন চালানোর পূর্বে চালকদের প্রশিক্ষণ নেয়া অতীব প্রয়োজন। একটু অসচেতনতার জন্য বৃদ্ধি পেয়েছে দুর্ঘটনা। প্রায় সময় দেখি অটোচালকেরা পায়ের উপর পা তুলে চালায়। এতে করে দুর্ঘটনাও ঘটে। ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যান ও রিক্সার যুগে পায়ে প্যাডেল করে চালিত ভ্যান ও রিক্সা তেমন চোখে পড়ে না।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২২ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর