বাঘায় কৃষি অফিসের পরামর্শে পদ্মার চরে বরই চাষে বিপ্লব

নুরুজ্জামান,বাঘা : পেছনে বিস্তীর্ণ বাগান।সামনে বরই’এর ঝুরি নিয়ে বসে আছেন একজন চসমা পরা মানুষ। অনেককেই ভাবতে পারেন, তিনি একজন সৌখিন বরই চাষী ।কিন্ত না, তিনি হলেন বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার সফিউল্লাহ সুলতান । যার ভাবনা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিকে সমৃদ্ধশালী করা।

সফিউল্লাহ মতে, বাঘার মাটি সকল প্রকার ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী। এর মধ্যে অন্যতম বরই। এটি উপজেলার দু’টি পৌর সভা সহ সকল ইউনিয়ন মিলে যে পরিমান উৎপাদন হয়, তার সমপরিমান উৎপাদন হয় পদ্মার চরাঞ্চলে।এ কারনে অত্র এলকার কৃষকরা বানিজ্যিক ভাবে বরই চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন। তার মতে, ক্যালারি সম্পন্য বরই গবেষণা চালিয়ে উন্নত জাত তৈরী করে ব্যাপক হারে চাষাবাদের ব্যবস্থা করলে এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী ফসল আমের পরে হবে কুল বরই এর স্থান। যা বিদেশে রপ্তানী করে অর্থনৈতিক ভাবে কৃষকদের সাবলম্বী করতে সাহার্য করবে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পদ্মার চরে বরই চাষে আত্মনিয়োগ করেছেন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা। পতিত জমিতে বরই চাষ করে একদিকে ওরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। কম খরচে বেশি লাভের আশায় চরের মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন এলাকায় আপেল, বাউ ও থাই জাতের কুল চাষ করে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছেন তারা।

চরের বরই চাষীরা জানান, বালুযুক্ত পদ্মার চরে এক সময় অন্য ফসল করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বর্তমানে এই চরে বরই চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে শফিকুল ইসলাম ছানা, বাঘা পৌর মেয়র আবদুর রাজ্জাক, জামাল উদ্দীন, সোনা মিঞা ও ইউসুফ আলী সহ আরো অনেকে। পদ্মার চরে এখন সোনার ফসল ফলানো যায়, তা প্রমাণ করছেন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় প্রায় এক হাজার একর জমিতে বরই চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচশ একর চাষবাস হয়েছে কেবল দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, বরই চাষ এ অঞ্চলে নিয়মিত অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পাশা-পাশি উল্লেখ যোগ্য অর্থকারী ফসল। যা কৃষি ক্ষেত্রে এনে দিয়েছে নতুন বিপ্লব। কৃষি বিভাগের মতে, এখানকার মাটি দো-আঁশ। যা বরই চাষের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী।

চরাঞ্চলের বরই চাষী শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, বর্তমানে স্থানীয় বিভিন্ন জাতের কুল বরই ছাড়াও উন্নত জাতের আপেল কুল,বাউকুল, তাইওয়ান ও থাইকুলের চাষ হচ্ছে ব্যপক ভাবে। এর মধ্যে আপেল কুল জনসাধারণের কাছে বেশি সমাদৃত। কুলের চাষাবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারী সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ,সার-বিষ ইত্যার্দি সুবিধা ও আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা পেলে বরই চাষে আগামীতে আরো বিপ্লব সাধিত হবে।

তিনি বলেন,এ বছর ৪০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করেছি। এর মধ্যে আপেল কুলে কিছুটা বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য সকল কুলে তিনি বিঘা প্রতি ১৫০ থেকে ৬০ মন হারে ফলন পাবেন। তিনি জানান, এই কুলবাগান রোপন ও পরিচর্যায় তার গত এক বছরে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। তিনি আশাবাদী কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এ সকল বাগান থেকে চলতি মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার কুল বিক্রয় করতে সম হবেন। তার মতে, এ অঞ্চলের কুল অত্র অঞ্চলের চাহিদা পুরণের পাশা-পাশি প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা-সহ সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল এলাকায় চালান দেয়া হচ্ছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২ | সময়: ৮:০৪ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ