শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা : বর্ষা যেতে না যেতেই ছোট্র ফকিরানী নদী শুকিয়ে যায়। দু’পাশে বিস্তৃর্ণ উর্বর জমি থাকলেও শুধু পানির অভাবে সেগুলো অকেজোই পড়ে থাকে। বোরোর মওসুম না আসা পর্যন্ত নদী পাড়ের কৃষকদের এক রকম হাত গুটিয়েই বসে থাকতে হয়। আর জেলেরা যে যার মতন অন্য পেশায় চলে যায়। আজ সেই সব দিনের পরিবর্তন এসেছে। নদী কূলের কৃষকদের হাতে এখন শুধু কাজ আর কাজ। আর জেলেরা বর্ষ চলে গেলেও এখনও ব্যস্ত সময় কাটায় মাছ ধরা নিয়ে। এই দৃশ্য বাগমারার বিশাল এলাকার। আর এর সুফল পাচ্ছে হাজার হাজার কৃষক ও জেলে পরিবার।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এলাকার আমুল এই পরিবর্তনের কথা। জানা গেছে বিশাল বাগমারা উপজেলার ভিতর দিয়ে একে বেকে যে নদী প্রবাহিত হয়েছে তাকে এলাকার লোকজন ফকিরানী নদী বলেই চেনে। এটি নওগাঁর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আত্রাইয়ের শাখা নদী। নওগাঁর প্রসাদপুর-জোতবাজার হয়ে এটি ফকিরনী নদী নাম ধারন করে বাগমারার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগমারার শ্রীপুর এলাকায় গিয়ে বারনই নদী নাম ধারন করে নলডাংগা নাটোর হয়ে যমুনার সাথে মিশেছে। নদীর অপর অংশ বাগমারা থানার পাশ দিয়ে মোহনগঞ্জ ও নওহাটা হয়ে মিলিত হয়েছে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে। ফকিরনী বারনই মিলে বাগমারায় এই নদী প্রবাহিত হয়েছে প্রায় ৫০ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে। বাগমারা উপজেলার বিএমডিএ’র উপসহকারি প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, নদী সংলগ্ন বিশাল এই এলাকার হাজার হাজার কৃষকের বর্ষা চলে যাওয়ার পর হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এক মাত্র পানির অভাবে তারা নদী সংলগ্ন এলাকায় চাষাবাদের কোন কাজ করতে পারে না। তিনি জানান, বিগত দুই বছর পূর্বে নাটোরের নলডাংগা এলাকায় বিএমডিএ’র উদ্যোগে রাবার ড্যাম নির্মাণ করার ফলে নলডাংগা, বাগমারা ও মান্দা এলাকার হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য খুলে গেছে। তারা এখন নদীর চর এলাকায় আলু, বেগুন, পিয়াজ, মরিচ, সরিষা সহ প্রায় ১৪/১৫ প্রকার রবি শস্য উৎপাদন করতে পারছে। তিন উপজেলার প্রায় পঁচিশ হাজার হেক্টর জমিতে রাবার ড্যামের সৃষ্ট পানি দিয়ে এসব রবি শস্য আবাদ হচ্ছে। শুধু রবি শস্যই নয়। এসব এলাকার জেলেরা এখন সারা বছর নদীতে পানি পেয়ে মাছ শিকার করে সহজেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে। কাচারীকোয়ালীপাড়ার কুষক আমিনুল হক , ইয়াছিন আলী ও কুদ্দুস জানান, আগে বর্ষা চলে গেলে এই সময় নদী পুরোটাই শুকিয়ে যায়। তখন নদীতে কৃষক বিছন( বোরো চারার বীজ তলা) করত। এখন রাবার ড্যামের ফলে নদীতে পানি থাকায় এই পানি দিয়ে নদী পাড়ের কৃষকরা অতি সহজেই বিভিন্ন রবি শস্য উৎপাদন করতে পারছে। এই কৃষকরাও এবার নদীর পানি দিয়ে আলু, পিয়াজ, সরিষা সহ বিভিন্ন রবি শস্যের আবাদ করেছেন। একই এলাকার মৎস জীবি জুয়েল, কাওসার জানান, এবার বর্ষা ব্যাপক হওয়ায় অনেকের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ফলে অনেক জেলে মাছ ধরে লাভবান হয়েছেন। তবে র্যাবার ড্যামের কারণে এখন নদী ভরা পানি থাকায় জেলেরা এখনও খেয়া জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারছে। জেলেদের মতে, রাবার ড্যাম এখন তাদের কাছে আশির্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের রুটিরুজির ভরসা এই রাবার ড্যাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা বিএমডিএ’র সহকারি প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, সরকারের রাবার ড্যাম প্রকল্প চালু হওয়ায় কৃষক মৎসজীবি সহ নিম্নআয়ের লোকজন সহজেই উপকৃত হতে পারছে। এর ফলে কৃষি ও মৎস খাতে বাড়তি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। তার মতে, রাবার ড্যাম প্রকল্প আরো সম্প্রসারন করে পাওয়ার পাম্প দিয়ে নদী সংলগ্ন খালের ভিতর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা হলে অন্তত পাঁচ কিঃমিঃ এলাকার উর্বর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএমডিএ’র মাধ্যমে পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাজিবুর রহমান জানান, বিএমডিএ’র রাবার ড্যাম প্রকল্প কৃষক মৎসজীবি সহ নিম্ন আয়ের মানুষ উপকৃত হলেও কিছু কিছু এলাকার স্লুইসগেইট পুরাতন ও অকেজো হওয়ায় রাবার ড্যামে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই সব স্লুইস গেইট দিয়ে অতি সহজেই বিল এলাকায় পানি ঢুকে বিলের আবাদী জমি তলিয়ে যাচ্ছে। তিনি বাগমারা এলাকার অকেজো স্লুইস গেট গুলো সংস্কার করে নতুন গেইট নির্মাণ করে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন। তার মতে, রাবার ড্যাম প্রকল্প সরকারের একটি যুগান্তকরী পদক্ষেপ। এই প্রকল্পকে পরিকল্পনার মাধ্যমে আরো সম্প্রসারণ করা হলে শুস্ক মওসুমে আরো অনেক অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে।