রাজশাহীতে সেমাই তৈরির ধুম

স্টাফ রিপোর্টার : ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকায় সেমাই তৈরির কারখানায়। লাচ্চা বা খিল সেমাই তৈরিতে দিনরাত কাজ করছেন কারিগররা। তৈরি এসব সেমাই জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাগুলোতেও যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন এবার সবমিলিয়ে পাঁচ কোটি টাকার সেমাই কেনাবেচা সম্ভব হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকায় অন্তত ২০ টি কারখানায় সেমাই সেমাই তৈরি হয়। এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমী ব্যবসাসীরা সেমাই উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত সেমাই স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কারখানাগুলোতে রোজার শুরু থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষের। ঈদের সময়ে বাড়তি আয়ে খুশি সেমাই কারিগররা। তবে কারখানাগুলোতে কারিগরদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরিতে কাজ করতে দেখা গেছে। কারখানা মালিকদের দাবি তারা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সেমাই তৈরি করছেন।
কারিগররা বলেন, প্রত্যেক কারখানায় ৮ থেকে ১২ জনের দল সেমাই তৈরিতে কাজ করেন। তাদের মধ্যে কেউ আটার খামির তৈরি করেন। কেউ সেমাইয়ের খাচা বানান। কেউ তেলে ভাজেন। অন্যরা প্যাকেটিং কাজে করেন। খাচিতে তোলেন। প্রতিটি দল প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ বস্তা সেমাই প্রস্তুত করতে পারেন। তবে এই কাজ বছরের সব সময় থাকে না। কেউ কেউ শুধু ঈদের মৌসুমেই সেমাই তৈরি করে থাকেন।
রাজশাহী নগরীর সপুরাস্থ বিসিক শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানা ঘুরে কারিগরদের ব্যস্ততার চিত্র দেখা গেছে। কারিগররা রমজানের শুরুর দিকে অল্প সেমাই তৈরি করলেও ঈদ ঘনিয়ে আসায় বাড়তে থাকে ব্যস্ততা, সেইসঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন। স্বপন ইসলাম নামের একজন কারিগর বলেন, সেমাই তৈরি মৌসুমি কাজ। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই কাজ হয়ে থাকে। যেমন, দুই ঈদ। বাকি সময় অন্য কাজ করতে হয় এই কারিগরদের। এই কাজে একেক কারিগরের মজুরি একেক রকম পেয়ে থাকেন।
কারিগর নজরুল ইসলাম বলেন, রোজা রেখে আগুনের কাছে বসে কাজ করাটা কষ্টকর হয়। ঈদে সেমাই তৈরির সবধরনের কাজ তাদের কারতে হয়। সেমাই ভাজার পরে সেই সেমাই আবার খাচিতে সাজিয়ে রাখতে হয়। আবার কখনও কখনও প্যাকেট করতে হয় তাদের। যদিও বা এই কাজে আলাদা লোকও আছে। তবে তাদের মধ্যে থেকেই কাউকে না কাউকে এসব কাজ করতে হয়।
রাজশাহীর রাতুল বেকারির মালিক মো. মানিক বলেন, রোজার শেষভাগে তাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। তারা রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকে সেমাই তৈরির কাজ শুরু করে থাকেন। তারপরে চাহিদা মত বাড়তে থাকে সেমাই তৈরি। অনেক সময় বাইরের জেলাগুলোর অর্ডার মোতাবেক সরবরাহ করতে হয় তাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর বেকারি মালিক বলেন, রমজানের প্রথম দিক থেকে এই কাজ শুরু হলেও শেষের ১০ দিনে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কারখানার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেমাই তৈরির চেষ্টা করে থাকি।
রাজশাহী জেলা বেকারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর বলেন, রাজশাহীতে ২০টি বেকারি সেমাই তৈরি করে। এই সেমাইগুলো জেলার বাইরেও বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন ঈদে উপলক্ষে বেকারিগুলো প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সেমাই বিক্রি করবে।
বিসিক রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামীম হোসেন বলেন, রাজশাহীতে যে সেমাই তৈরি করা হয়- সেগুলো জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশের জেলাগুলোতে বিক্রি করা হয়।


প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৪ | সময়: ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর