নগরীতে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে পুকুর ভরাটের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন দায়রাপাকের মোড় মেহেরেচন্ডি এলাকায় রাস্তার পাশেই অবৈধভাবে একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪ বিঘা আয়তনের পুকুরটি ভরাট করতে গত সোমবার (২৫ মার্চ) রাত থেকেই কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। আইন অনুযায়ী রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় পুকুর-জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ; তার পরও আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে অবৈধ এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অজ্ঞাত কারণে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছে।
এদিকে, পুকুর ভরাটের দায়ীত্বে থাকা নগরীর মতিহার থানাধীন মোহনপুর এলাকার ছানা ও লালন এ পুকুরের মালিকানায় কারা রয়েছেন এব্যাপারে মুখ খুলছেন না। আইন অমান্য করে কেন পুকুর ভরাট করা হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ছানা বলেন, পুকুরের শ্রেনী পরিবর্তণ করা হয়েছে। এছাড়া এখানে অনেকগুলো মালিক রয়েছেন। তাদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্যালো মেশিন দিয়ে পুকুরের পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। আরেক দিকে ড্রাম ট্রাকে করে বালু নিয়ে এসে পুকুর পারে রাস্তার ওপর ফেলা হচ্ছে। অন্য দিকে হুইল লোডার মেশিন দিয়ে রাস্তার ওপর পড়ে থাকা বালুগুলো নামিয়ে দেয়া হচ্ছে সেই পুকুরে। রাতে পুকুরটির কিছু অংশ ভরাট হয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়।
পুকুরটি মাছ চাষের জন্য পুর্বের মালিক গোলাম মওলা ও তার শরিকদের কাছ থেকে লিজ নিয়েছেন মেহেরচন্ডী এলাকার সোহেল রানা। তিনি জানান, গত ৬ বছর থেকে পুকুরটিতে তিনি মাছ চাষ করেন তাকে না জানিয়ে গোপনে বিক্রি করেছেন পুকুর মালিকরা।
প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা আমার খরচ হয়। রাতের আধারে এভাবে পুকুর ভরাট হলে আমি ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়ব।
তিনি আরও বলেন, এর আগে আব্দুল হালিম নামের এক ব্যক্তি পুকুর পারে একটি ব্যানার দিয়ে ছিলেন। তবে কে বা কারা ব্যানারটি তুলে ফেলে। কাগজ কলমে পুকুরের আয়তন সাড়ে ৪ বিঘা, সরেজমিনে তা হয়ে আছে সাড়ে ৮ বিঘা। গোলাম মওলা ছাড়াও অন্যান্য মালিকদের বাৎসরিক খাজনা দিতে হয়।
রাজশাহী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, এর আগে মেহেচন্ডি এলাকায় ওই পুকুর ভরাটের অভিযোগে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়। আইন অনুযায়ী পৌর অথবা সিটি করপোরেশন এলাকার ভেতরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জলাধারের আকার পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তার পরও রাজশাহীতে অব্যাহতভাবে চলছে পুকুর-জলাধার ভরাট।
নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আলী পিয়ারা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এর আগে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) একটি প্রচারপত্র বিলি করেছিল। ওই প্রচারপত্রে বলা হয়, নগরীতে কেউ পুকুর ভরাট করতে চাইলে অনুমতি নিতে হবে। এমনকি কেউ অবৈধভাবে পুকুর ভরাটের বিষয়ে টেলিফোনে অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র এর বিপরীত। আরডিএ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, পুকুর ভরাটের সাথে যারাই জড়িত থাকুক, আইনের উর্ধ্বে কেউই নয়। এ বিষয়ে তিনি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।#


প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৪ | সময়: ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ