বাগমারায় বইছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া

মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতেই বইতে শুরু করেছে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরইমধ্যে শুরু করেছেন গণসংযোগ সহ নানান তৎপরতা। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ দলীয় নেতৃবৃন্দ। এবার নৌকা প্রতীক না থাকায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। ফলে নির্বাচনের মাঠে আলোচনায় নেই স্থানীয় বিএনপি। এ কারণে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতারাই নির্বাচনে প্রস্ততি নিচ্ছেন। অধিকাংশ নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক নেতা চা স্টল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাট-বাজারে ও ইসলামী জালসা সহ হিন্দুদের হরিবাসরে গিয়ে নিজের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন। অনেক প্রার্থী এরইমধ্যে পোস্টার ও বিলবোর্ড স্থাপনের কাজও শুরু করেছেন।
এবারের বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচেন সম্ভাব্য যেসব প্রার্থীরদের তৎপরতা আলোচনার শীর্ষে রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু।
তিনি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসাবে জোর তৎরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় নেতা কর্মীরা বলেছেন গোটা উপজেলা ব্যাপি সান্টুর রয়েছে বিশাল জনপ্রিয়তা। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের রাজনৈতিক গুরু হিসাবে পরিচিতি।
সান্টুর অনুগত নেতা কর্মীদের বিশ্বাস, এবার উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না থাকলেও সাংসদ আবুল কালামের সমর্থন সান্টুর প্রতিই থাকবে। নির্বাচেন আরো যাদের নাম জোরালো হিসাবে শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন এ্যাড. ইব্রাহীম হোসেনের।
তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও রাজশাহী বার এ্যাসোসিয়েসনের সভাপতি। এর আগে চেয়ার প্রতীক নিয়ে তিনি বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। অ্যাড ইব্রাহীমেরও বাগমারায় রয়েছে বেশ পরিচিতি।
তিনিও স্থানীয় সাংসদের আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত। এছাড়া স্থানীয় সাংসদের আরেক আস্থাভাজন ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনী মাঠে ঘুরে ফিরে যার নাম প্রচারিত হচ্ছে তিনি হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা বিরেন্দ্রনাথ সরকার।
সাবেক এই ব্যাংকার এর আগে বিএনপি-জামায়ত জোট সরকারের আমলে তাদের অন্যায় অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাকে দুর্গম এলাকায় বদলীসহ নানান ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়। পরে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের পনের বছরের সময় একই পরিনিত ভোগ করতে হয় এই নেতাকে। বলা যায় এখানে ত্যাগি ও নির্যাতিত নেতাদের মধ্যে তিনিই শীর্ষে।
বিরেন্দ্রনাথের পরপরই প্রার্থীতায় এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অনীল কুমার সরকারের নাম। তিনি বাগমারার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়া সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের দক্ষিণহস্ত হিসাবে পরিচিত। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি এনামুলের কাঁচি প্রতীকের ভোট করে পরাজিত হয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এবারের নির্বাচনে তিনিও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আসন্ন নির্বাচনে এনামুলপন্থী হিসাবে আরো যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হলেন মতিউর রহমান টুকু। তিনি এর আগে পোস্টারিং করে জানান দিয়েছেন আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন।
এছাড়া প্রার্থীর তালিকায় যাদের নাম প্রচার প্রচারণায় রয়েছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক মাহাবুবুর রহমান। তিনি বর্তমান সাংসদের অঘোষিত ব্যক্তিগত সহকারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আরো যাদের নাম প্রার্থী হিসাবে গুঞ্জন ওঠেছে তারা হলেন, বর্তমান শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা, গোয়ালকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সরকার ও উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তারের নাম। দলীয় একাধিক সূত্র মতে এবারের বাগমারার উপজেলা নির্বাচন হবে ব্যাপক স্পর্ষকাতর। কারণ বিগত সংসদ নির্বাচনে বাগমারার এনামুল বিরোধী সকল নেতা একাট্রা হয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগ গঠন করে নৌকা প্রতীক ছিনিয়ে নিয়ে বিপুল ভোটে এনামুলকে পরাজিত করে। ফলে বাগমারায় রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টি হয়।
তাই তৃণমুল আওয়ামী লীগের ঐক্য ধরে রাখতে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। অপরদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান সাংসদের আস্থাভাজন প্রার্থী আতাউর রহমান সরকার। তিনি জেলা কৃষকলীগের অন্যতম নেতা।
ইতোমধ্যে তিনি পোস্টার ও বিলবোর্ড সাটিয়ে তার প্রার্থীতার বিষয়টি জানান দিয়েছেন। এই পদে প্রার্থী তালিকায় আরো রয়েছেন বর্তমান ভাইসচেয়ারম্যান সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের পিএস আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি সংসদ নির্বাচনে এনামুলের পরাজয়ের পর আর জনসম্মুখে বের হননি। তবে তার ঘনিষ্টজনরা বলেছেন তিনি এবারও প্রার্থী হবেন।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরো যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হলেন, হাটগাঙ্গোপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুজ্জামান শহিদ। দলীয় সূত্র মতে এই পদে আরো প্রার্থী সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগেই তারা প্রচার প্রচারণায় নামবেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আপাতত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান সাংেেসদর আস্থাভজন ও বিশ্বস্থ কর্মী হিসাবে পরিচিত উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি কোহিনুর বেগম। তিনি এখন থেকেই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
এছাড়া প্রার্থী তালিকায় আরো রয়েছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবি। তবে তিনিও বিগত সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধতা করে ও কাঁচি প্রতীকের ভোট করে এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন।
স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মতে, বাগমারায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে তেমন উত্তাপ ছড়াবে না। এখানে আওয়ামী লীগের সাথে আওয়ামী লীগের লড়াই হবে।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সহ অন্যান্য দল অংশ না নেওয়ায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে তেমন আগ্রহী নয়। তারপরও নৌকা প্রতীক না থাকায় এবং প্রার্থীতা উন্মুক্ত থাকায় সাধারণ ভোটাররা আশা করছেন এবারের উপজেলা নির্বাচেন সৎ ও যোগ্য নেতারা অংশ নিবেন।


প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৪ | সময়: ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ