আমাদের বাঁচাতে এলে মাথায় বন্দুক ধরে জলদস্যুরা’

সানশাইন ডেস্ক: ভারত মহাসাগরের জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার করতে চেয়েছিল ইউরোপীয় ও ভারতীয় দুটি যুদ্ধজাহাজ। ‘এমভি আবদুল্লাহ’কে অনুসরণ করে বেশ কিছুদূর এগোয় দুটি জাহাজ। বিষয়টি টের পেলে জলদস্যুরা নাবিকদের মাথায় অস্ত্র তাক করে। এ সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে তারা। জিম্মিদের ক্ষতির আশঙ্কায় পিছু হটে যুদ্ধজাহাজ দুটি।
বৃহস্পতিবার ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ খান পরিবারের কাছে তিন মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি অডিও বার্তা পাঠান। সেখানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে। অডিও বার্তাটি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসে পৌঁছেছে।
অডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘ভালো আছি, সুস্থ আছি। কিন্তু মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত। এখন আমরা সবাই জাহাজের ব্রিজে ঘুমাই। এরকম তো আমাদের অভ্যাস নেই। তারপরও ঘুমাচ্ছি। একটা ওয়াশ রুম ব্যবহার করি সবাই। গতকাল (বুধবার) একটা নেভি জাহাজ আসছিল। এরপর আজও (বৃহস্পতিবার) একটা নেভি জাহাজ আসে। টোটাল দুটি জাহাজ আমাদেরকে রেসকিউ (উদ্ধার) করতে চেয়েছিল। কিন্তু এটা পসিবল না। কারণ, তখন তারা (জলদস্যু) আমাদের জিম্মি করে রাখে। মাথায় গান (পিস্তল) ধরে রাখে। সব যন্ত্রপাতি নিয়ে দুটি নেভি জাহাজ আসছিল। তারা (দস্যুরা) এগুলো ভয় পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘তবে ব্যাপার হচ্ছে, এখন পর্যন্ত হার্ট (আঘাত) করেনি। যেটা সমস্যা, আমি যেখানে ঘুমাই একপাশে ঠিক আছে দেখা যায় না কিন্তু আরেক পাশ হলে দেখি যে আমার দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রাখছে। এ অবস্থায় কি ঘুম আসে? এরপরও ঘুম যা হওয়ার হচ্ছে। তারপরও সুস্থ আছি। একটু মানসিকভাবে কষ্টে থাকলেও সুস্থ আছি। সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি। আলহামদুলিল্লাহ, এখনও খাওয়াদাওয়া আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলদস্যুরা আমাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করছে। আমাদের পানি ব্যবহার করছে। আমাদের এ খাবার হয়তো ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। এর পর আমাদের খাবার যখন শেষ হয়ে যাবে তখন আমরা খুব কষ্টে পড়ে যাবো। পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পড়ে যাবো। এটাই হলো আমাদের পরিস্থিতি।’
দোয়া চেয়ে ক্যাপ্টেন আতিক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ৩টায় আমরা সোমালিয়ায় আসলাম। পরে ওদের সঙ্গে আমাদের ভালো রিলেশন হয়েছে। আমরা বলেকয়ে কেবিনে আসলাম। আবার ব্রিজে চলে যেতে হবে। কথা হচ্ছে, মানসিকভাবে আল্লাহ যত দিন শক্ত রাখে। তোমরাও ভালো থেকো। সবাইকে দোয়া করতে বলো। আমরা যেন নিরাপদে আসতে পারি। আল্লাহ যেন রোজার উসিলায় সহজ করে দেন। আমরা ব্রিজে বসে আল্লাহ আল্লাহ করি। সবাই আল্লাহকে ডাকি। আল্লাহ যাতে আমাদের ডাক শোনেন।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘সবাই যেহেতু আমাদের জন্য দোয়া করছে। সরকারও যেহেতু পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের কোম্পানিও এ বিষয়ে সজাগ আছে। বিশ্ব মিডিয়াও আমাদেরকে নিয়ে কথা বলছে। ইনশাআল্লাহ, আমি আশা করি পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবো। ঈদের আগেই আমরা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। দোয়া করো, আল্লাহ আমাদের যেন এ কঠিন যাত্রাকে সহজ করে দেয়। তোমরাও ভালো থেকো। আসসালামু আলাইকুম।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের অবস্থান শনাক্ত করেছি। জাহাজটিকে জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সোমালিয়া উপকূল থেকে ৭ নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে নোঙর করেছে। এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা জাহাজ মালিকপক্ষকে ফোন করে কোনও দাবিদাওয়া জানায়নি।’
কবির গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘২০১০ সালেও আমাদের মালিকের আরও একটি জাহাজ একই জলদস্যু বাহিনীর কবলে পড়েছিল। সে সময় ১০০ দিন পর জাহাজসহ সব নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও সব নাবিকদের সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে আনতে পারবো বলে আশা করছি। এখন পর্যন্ত সব নাবিক ভালো আছেন।’
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারেন গ্রুপের কমকর্তারা। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন।


প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৪ | সময়: ২:২৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ