ডান হাত নেই, বাঁ হতে লিখেই হুজাইফা হতে চায় ম্যাজিস্ট্রেট

মওদুদ আহম্মেদ, আক্কেলপুর: শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে বাম হাতে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মেধাবী হুজাইফা মোল্লা। এমনই অদম্য ইচ্ছার পরীক্ষার্থীর দেখা মিলেছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। কেন্দ্র থেকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হলেও তা নেয়নি সে। প্রমাণ করতে চায় ইচ্ছার কাছে প্রতিবন্ধকতা কোন বাধা নয়। তবে তার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পারিবারিক দারিদ্রতা।
রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই কেন্দ্রের নয় নম্বর কক্ষে বাম হাতে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছেন হুজাইফা মোল্লা। ডান হাত কুনুইয়ের নিচ থেকে নেই। অন্যান্য সুস্থ ও স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীর মতোই বাম হাতে লিখে যাচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় নেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধি।
পরীক্ষা শেষে তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধি, নেই তার ডান হাতের কুনুইয়ের নিচের অংশ। পরিবারের দারিদ্রতা হার মানাতে পারেনি তাকে। শিক্ষা জীবনে প্রতিটি শ্রেণিতে মেধার পরিচয় দিয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট হওয়াকে মুল লক্ষ্য করে চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা।
আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব আব্দুল মোমিন বলেন, হুজাইফা বাম হাত দিয়ে খুব সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে বিধি মোতাবেক অতিরিক্ত সময় দেওয়া হলেও সে অতিরিক্ত সময় না নিয়েই অন্যান্য সুস্থ পরীক্ষার্থীর মতোই স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে। আশা করি সে ভালো করবে।
জানা গেছে, সে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভানুরকান্দা গ্রামের কৃষক মনজুর রহমান ও শাহানা দম্পতির ছেলে। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে সে শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে বড় হতে থাকে। হুজাইফা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হলেও সাংসারিক এবং প্রয়োজনীয় সকল কাজ করতে পারে।
গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন প্রতি শ্রেনিতেই প্রথম হয়েছে। পরে সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির পর ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেনিতেও প্রথম হয়। অষ্টমে এসে দ্বিতীয় হলেও নবম ও দশমে প্রথম স্থান অধীকার করে। তার অদম্য ইচ্ছা বড় হয়ে সে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। প্রমাণ করতে চায় ইচ্ছা আর প্রচেষ্টার কাছে প্রতিবন্ধকতা কোন বাধা নয়। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সব সুবিধা পাচ্ছে হুজাইফা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সে ভালো করেছে আর এবারও ভালো ফলাফল করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
হুজাইফা বলেন, জন্ম থেকেই আমার ডান হাত নেই। আমি বাম হাত দিয়েই সকল কাজকর্ম করতে পারি। প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। বাম হতে লিখে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি এখন পর্যন্ত পরীক্ষাগুলো খুব ভাল হয়েছে। আমার ইচ্ছা ভবিষ্যতে ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে প্রমাণ করতে চাই প্রতিবন্ধিতা কোন বাধা নয়।
কথা হয় তার বাবা মনজুর রহমানের সাথে, তিনি বলেন, ছোট থেকেই হুজাইফা পড়ালোখায় মেধাবী। তার ডান হাত না থাকলেও সংসারের সকল কাজ করে পরিবারে সহযোগিতা করে আসছে। সে কখনো নিজেকে প্রতিবন্ধি বা শারীরিক অক্ষম মনে করে না। চার ভাইবোনের মধ্যে সে মেজো। পরিবারে অভাব থাকায় তাকে নিয়ে চিন্তিত। তার ইচ্ছা পূরনে আমরা সর্বপ্রকার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, আমার বিদ্যালয়ের মধ্যে সে একজন অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী। সে হার মানতে নারাজ। সকল পরীক্ষায় বাম হাত দিয়ে লিখেই প্রথম স্থান অধীকার করেছে। বিদ্যালয় থেকে তাকে উপবৃত্তি সহ সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সে অনেক ভালো পর্যায়ে যাবে বলে মনে করি।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, হুজাইফাকে সমাজ সেবা দপ্তর থেকে আর্থিক ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। বাম হাতে পরীক্ষা দিয়ে সে ভালো করায় অন্যান্য প্রতিবন্ধিরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে তাকে দেখে। আমরা তার পাশে আছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, তার বিষয়ে জানতে পেরে আমরা তার পাশে দাঁড়িয়েছি। সে যেন ভালো পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য কেন্দ্র সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।


প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৪ | সময়: ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ