চাঁ’নবাবগঞ্জের মাদ্রাসায় অবৈধ পথে অধ্যক্ষসহ ৪ পদে নিয়োগের চেষ্টা

স্টাফ রির্পোটার, শিবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির (গভর্নিং বডি) অনুমোদন ছাড়াই গোপনে তড়িঘরি করে অধ্যক্ষ সহ ৪ পদে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে একটি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে গত সপ্তাহে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে নিজের অজ্ঞতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের।
গোপন সুত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার চাতরা ইসলামিক কালচারাল ইনস্টিটিউটে গিয়ে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সকালে গভর্নিং বডির দুই জন অভিভাবক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, নিয়ম অনুসারে এনটিআরসি বহির্ভূত নিয়োগ গুলোতে গর্ভনিং বডির সভার মাধ্যমে প্রস্তাবণা উত্থাপনের পর তা গৃহীত হলে সে মোতাবেক রেজুলেশন করার পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। কিন্তু চাতরা ইসলামিক কালচারাল ইনস্টিটিউটে কমিটির কোন সভা না করে, কোন রেজুলেশন না লিখে গত ৮ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় পেপারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদে যথাক্রমে একজন করে অধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং সৃষ্ট পদে একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটর অপারেটর নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তারা আরো জানান, সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে গোপনে নিয়োগ দিতেই এ অনৈতিক কাজ করেছেন।
মাদ্রাসাটির আলিমে অধ্যায়নরত এক ছাত্র পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, গোপনে একটি মহলের সাথে প্রায় কয়েক লাখ টাকার চুক্তিতে এ ধরনের বিধি বহির্ভূত নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছিল।
চককীর্ত্তি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হাসান আনুর দাবী অধ্যক্ষ সহ ৪ টি নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত ২০ লাখ টাকার বানিজ্যের চেষ্টা চলছিল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল জানান, শুধু চাতরা মাদ্রাসায় নয় জেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ না হয়ে এক একটি পদের জন্য সর্বনিম্ন ৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন নিয়োগ হয়ে থাকে। এতে যোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়ে এবং অযোগ্যরা চাকুরিতে প্রবেশ করে ঐসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে।
এদিকে, চাতরা ইসলামিক কালচারাল ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা. আব্দুস শুকুর বলেন, আমাকে সভাপতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় দিতে বলেছিলেন, তাই দিয়েছি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে রেজুলেশন লিখতে বা মিটিং করতে হয় তা আমার জানা ছিলো না। আমার অজ্ঞতার জন্য এই ঘটনাটি ঘটেছে।
এব্যাপারে গভর্নিং বডির সভাপতি হারুন অর রশিদ পাভেল মিঞা বলেন, আমাদের আগের বিজ্ঞপ্তি করা ছিলো। ইতোমধ্যে আমাদের অফিস সহকারী অবসরে গেছেন। আমরা গত ৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক প্রতিনিধিসহ কমিটির অধিকাংশ সদস্য মিটিং করেছিলাম। সে মিটিং সিদ্ধান্ত হয় আমাদের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেয়া জরুরি। তাই অধ্যক্ষকে বললাম পূর্ণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিতে। আগের রেজুলেশন অনুযায়ী করেছি। তবে রেজুলেশন করার পর এর মেয়াদ পার হয়ে গেলে আবার রেজুলেশন ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কোন আইনে দিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ’আপনার যা ইচ্ছে তাই করেন।’
বিনোদপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ উমর ফারুক মাদ্রাসার জনবল কাঠোমোর আলোকে জানান, গর্ভনিং বডির অনুমোদনের পর একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পেলে ৬ মাসের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। না পারলে আবার সভার মাধ্যমে রেজুলেশন করে পুনরায় নিয়োহ বিজ্ঞপ্তি দেয়া যাবে। রেজুলেশন ছাড়া কোন ভাবেই পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া যাবে না।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবেদিন জানান, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি ঢুকে যাওয়ার কারণে শিক্ষার মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। যেদিন থেকে বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনীতি বন্ধ হবে, সেদিন থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে।
স্থানীয় রাজনীতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক নিয়মে চলছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাষ্ট্রপতির পরে গভর্ণিং বডির সভাপতিকে বিশেষ ক্ষমতায় দেওয়ায় তারা নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করছে।
রেজুলেশন ছাড়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কোন নীতিমালা নাই। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রেজুলেশন ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে সেক্ষেত্রে কেউ যদি অভিযোগ করেন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪ | সময়: ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ