রাজশাহীর বাজারে কমেনি কাঁচামরিচের দাম

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে কিছুদিন ধরেই অস্থিতিশীল রয়েছে কাঁচামরিচের দাম। বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। ঈদের আগে থেকেই হঠাৎ করেই দেশের অন্যান্য স্থানের মত রাজশাহীর বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি পণ্য কাঁচা মরিচের দাম আকাশচুম্বি হয়ে ওঠায় বিপাকে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা।
শনিবার সকাল থেকে মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে মানভেদে ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। খুচরা পর্যায় ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচের দাম পড়ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। তবে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে কাঁচামরিচের সরবরাহ খুবই কম লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিনে মহানগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সাহেব বাজার, মাস্টারপাড়া, নওদাপাড়া, শালবাগান ও লক্ষীপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে নগরের বাজারে স্থানভেদে খুচরা পর্যায়ে কাঁচা মরিচের দামে ১০ থেকে ১৫ টাকার ব্যবধান রয়েছে।
মহানগরের সাহেব বাজারের খুচরা বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি ও খরার কারণে রাজশাহীতে কাঁচামরিচের ফলন খারাপ হয়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বাড়তি আর দেশে ভারতীয় কাঁচামরিচ আমদানি হলেও তা বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।
তিনি বলেন, আমদানি করা ভারতীয় কাঁচামরিচ এখনও রাজশাহীর স্থানীয় বাজারে ঢোকেনি, দেশি মরিচের স্বাদ, গুণগত মান ও আকার ভালো হওয়ায় ভারতীয় মরিচের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে কম হবে বলেও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, চাহিদা তুলনায় ভারতীয় কাঁচামরিচ আমদানি হলেও বাজারে চাহিদা তুলনায় এর সরবরাহ কম, যে কারণে আমদানি করা ভারতীয় কাঁচামরিচের দাম দেশি মরিচের তুলনায় বেশি হবে বলেও জানান তিনি।
নগরীর মাস্টারপাড়া কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতা আব্দুল্লাহ বলেন, ৩৬০ টাকা কেজি দরে মরিচ কিনেছি বিক্রি করব ৪০০ টাকায়। আমরা লাভ ছাড়া কেউই বিক্রি করতে চায় না, পাইকারি বাজারে দাম কমলেও আমাদের এখানেও কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে তিনি আমদানি করা ভারতীয় মরিচ এখনো পাননি বলে জানান।
মহানগরীর লক্ষীপুর কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী বাবু বলেন, ‘আমাদের বাজারে এখনো আমদানি করা কাঁচামরিচ ঢোকেনি। দেশি কাঁচামরিচ এক কেজি ৩২০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। মহানগরীর শালবাগান ও নওদাপাড়া বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রয় হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে মরিচের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ আমদানিকৃত কাঁচামরিচ বাজারে এলেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হবে আর ব্যবসায়ীরা বলছে বৃষ্টি ও খরার কারণে দেশি মরিচের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় আমদানি করেও দামে লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না, সরবরাহ কম থাকায় কাঁচা মরিচের দাম বাড়তেই থাকে। তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেছেন খুচরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
তবে ব্যবসায়ীদের কথা মানতে নারাজ সাধারণ ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বন্দি কাঁচামরিচ। এ বিষয়ে একজন সাধারণ ক্রেতা সানি বলেন, আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ যদি বাজারে এসেছে, তাহলে দাম কেন কমছে না? নিশ্চয়ই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে রয়েছে রান্নার অতি প্রয়োজনীয় মসলা কাঁচামরিচ। সাহেব বাজারের সাধারণ ক্রেতা ও গৃহিনী বিলকিস বেগম বলেন, কাঁচা মরিচ ছাড়া কি তরকারি হয়? তরকারি হোক বা নিরামিষ হোক পরিমিত ঝাল না হলে অনেকের কাছে তরকারি স্বাদহীন হয়ে যায়। শালবাগানের আরেক সাধারণ ক্রেতা রিকশাচালক আব্বাস মিয়া ক্ষোভের সাথে বলেন, মরিচ ছাড়া কি পান্তা স্বাদ লাগে? মুড়ি মাখানোও স্বাদ লাগেনা।’ এখন আর আগের মতন মরিচ কিনতে পারেন না মরিচের দাম উর্ধ্বমুখী বলে, তিনি ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৯০ টাকায় কিনেছেন বলে জানান।
এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক জাতীয় গড় বাজার দর অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ের কাঁচামরিচের দাম সর্বনিম্ন ৩৮২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪১৭ টাকা রয়েছে। চলতি মৌসুমে কাঁচামরিচের দাম কমার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগরের বেশির ভাগ খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন খরার কারণে এ বছর মরিচের গাছ এবং ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে আবারও গাছগুলো তরতাজা হতে শুরু করেছে। ১০-১২ দিনের মধ্যে নতুন ফুলের মরিচ বাজারে আসা শুরু করবে। তখন দাম কিছুটা নাগালের মধ্যে আসবে।


প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২৩ | সময়: ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ