ট্রেনের ধাক্কায় স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে পাগলপারা উর্মি

বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বামী-সন্তানকে এক সঙ্গে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নাটোরের বড়াইগ্রামের জোনাইল গ্রামের গৃহবধূ উর্মি খাতুন (২৪)। তিনি ট্রেনের ধাক্কায় নিহত গার্মেন্টস কর্মী রতন হোসেনের স্ত্রী।
শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আনালিয়াবাড়ি এলাকায় এই দুর্ঘটনায় উর্মির স্বামীর বড়াইগ্রামের জোনাইল গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে রতন হোসেন (২৬), তাদের একমাত্র সন্তান রোহান ওরফে সানি (৪) ও বাসের অপর যাত্রী শরিফ মন্ডল (৪০) মারা মারা যান। নিহত শরিফ মন্ডল রাজশাহীর বেলপুকুর থানার মাহিন্দ্রা গ্রামের আলম মন্ডলের ছেলে।
শনিবার উর্মি খাতুন কাঁদতে কাঁদতে জানান, বাস বিকল হওয়ায় চার বছরের ছেলে সানিকে নিয়ে তারা দুজন নীচে নেমে আসেন। এ সময় রেল লাইনের উপরে বসে বাবা ও ছেলে জিলাপী খাচ্ছিলেন। আর তিনিসহ অন্য যাত্রীরা রেললাইনে কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়েছিলেন। এরই মধ্যে মেরামত হয়ে গেলে বাসে যাবার জন্য উর্মি হাঁটা শুরু করেন। আর রতন ছেলেকে কোলে তুলে নিচ্ছিলেন।
এ সময় হঠাৎ চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন এসে পড়ে। এরই মধ্যে উর্মি রেল লাইন পার হতে পারলেও তার স্বামী ও সন্তান ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান।
সরেজমিনে জোনাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুই খাটিয়ায় কাফনের কাপড়ে ঢেকে বাবা-ছেলের লাশ শোয়ানো। হাজার হাজার মানুষের ভীড়, পুরো বাড়ি ও পাশের রাস্তা লোকে লোকারণ্য। ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়ায় আগত কাউকেই বাবা-ছেলের মরদেহ দেখানো হয়নি। পাশেই বসে বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন রতনের স্ত্রী উর্মি, রতনের বাবা-মা ও একমাত্র জমজ ভাই মানিক প্রামাণিক।
এ সময় বিলাপ করতে করতে উর্মি খাতুন বলছিলেন ‘আমি শুধু একটা শব্দ শুনতে পেলাম। পেছন ফিরে দেখি আমার স্বামী-সন্তান যেন উড়ছে। ১৫-২০ হাত দুরে গিয়ে তারা যখন আছড়ে পড়েছে, তখন তাদের হাত-পা, মাথা ছিনভিন্ন। আমি ছুটে ছুটে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া স্বামীর মাথা, সন্তানের হাত-পা কুড়িয়ে কুড়িয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি।’
রতনের অপর চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা মাহিন জানান, ভোর চারটার দিকে ভাই ও ভাতিজার লাশ নিয়ে আমরা বাড়িতে ফিরেছি। ঘটনাস্থলে রেললাইনে একটি বাঁক থাকায় আগে থেকে ট্রেনটি দেখা যায়নি। এ জন্যই হয়তো দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
শনিবার বেলা ১১টায় জোনাইল ডিগ্রী কলেজ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে পাশাপাশি বাবা-ছেলের লাশ দাফন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ