নিলামে উঠছে মেসি-বার্সা : প্রথম চুক্তির সেই ন্যাপকিন পেপার

স্পোর্টস ডেস্ক: ফুটবলের ঐতিহাসি জিনিসপত্র বা অ্যানটিকস সংগ্রহ যাদের নেশা, তেমন ব্যক্তিরা হয়তো দীর্ঘদিন ধরেই এই একটি নিলামের অপেক্ষায় রয়েছেন। নিওয়েল ওল্ড বয়েজের মেসি প্রতিভায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বার্সা কর্মকর্তা কার্লেস রেক্সাস কাগজ না পেয়ে প্রাথমিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ব্যবহার করেছিলেন একটি ন্যাপকিন পেপার।যে ন্যাপকিন পেপারে স্বাক্ষরের মাধ্যমে মেসি চলে আসেন বার্সেলোনা ইয়ুথ একাডেমিতে। সেখান থেকে পরিণত হন আজকের বিশ্ব মাতানো তারকা ‘মেসিতে।’ সেই ন্যাপকিন পেপারটি এতদিন যত্ন সহকারেই সংরক্ষণ করা হয়েছিল। অবশেষে সেটা নিলামে উঠতে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ নিলাম হাউজ বোনহামসে অনুষ্ঠিত হবে সেই ন্যাপকিন পেপারের নিলাম। আগামী ১৮ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ চলবে এই নিলাম। ধারণা করা হচ্ছে, ন্যাপকিন পেপারটি ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে।
২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর, মাত্র ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে মাঠ মাতাচ্ছেন আর্জেন্টিনার রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে। এ খবর পান বার্সেলোনার প্রতিভা অন্বেষণকারী স্কাউট হোসে মারিয়া মিঙ্গুয়েলা। কিংবা তিনি নিজেই দেখতে পান অসাধারণ এই প্রতিভাকে।
মেসির তখন বিরাট সমস্যা। তার গ্রোথ হরমোনে সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। চিকিৎসা করানো না হলে ‘বামন’ হয়ে থাকতে হবে তাকে। কিন্তু এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তখনকার সময়ে প্রতি মাসে প্রয়োজন ৯০০ ডলার। বুয়েন্স আয়ার্সের বিখ্যাত ক্লাব রিভারপ্লেট মেসির প্রতিভার সন্ধান পেয়েছিলো। তারা চুক্তিও করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এত খরচ দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয় দেখে পিছিয়ে যায় রিভারপ্লেট।
মিঙ্গুয়েলার মধ্যস্থতায় ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে বাবা হোর্হে মেসির সঙ্গে বার্সায় এসে ট্রায়াল দেন লিওনেল মেসি। সঙ্গে ছিলেন দুই আর্জেন্টাইন প্রতিনিধি ফ্যাবিয়ান সোলদিনি ও মার্টিন মনতেরো এবং স্পেনের প্রতিনিধি হোরাসিও গ্যাগিওলি। ট্রায়ালে সবাইকে চমকে করে দেন তিনি। অমিত সম্ভাবনার মেসিকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। মেসিও রোজারিও ফিরে যান বার্সায় চুক্তি স্বাক্ষরের আশায়।
বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট তখন হুয়ান গাসপার্ত। তিনি ভেবেছিলেন, তাড়াহুড়া করে ছেলেটির সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কিছু সময় নিতে চান তিনি। কিন্তু গ্যাগিওলি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে জানালেন, দ্রুত চুক্তি না হলে অন্য ক্লাবে মেসিকে নিয়ে যাবেন, এমনকি হতে পারে তা রিয়াল মাদ্রিদও।
তিন মাস পর, ২০০০ সালেল ১৪ ডিসেম্বর। পম্পেইয়া দেল মন্তিউচ ক্লাবে বার্সার সাবেক ফুটবলার ও টেকনিক্যাল সেক্রেটারি কার্লেস রেক্সাসের সঙ্গে টেনিস খেলছিলেন গ্যাগিওলি। খেলা শেষে ক্লাবের ক্যাফেটেরিয়ায় লাঞ্চ করতে বসেছিলেন। তখন তাদের সঙ্গে যোগ দেন টালেন্ট হান্ট স্কাউট হোসে মারিয়া মিনগুয়েলা। মেসি যে দারুণ এক প্রতিভা তা রেক্সাসকে বোঝাতে সক্ষম হলেন মিনগুয়েলা ও গ্যাগিওলি।
আর তাদের কথা শুনে তখনই চারকোনা এক টুকরো ন্যাপকিন কাগজ নেন রেক্সিস। নিল কালিতে লিখলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে বার্সেলোনায় মিঙ্গুয়েলা, হোরাসিও এবং বার্সার টেকনিক্যাল সেক্রেটারি কার্লোস রেক্সাসের উপস্থিতিতে কিছু বিষয়ে অমত থাকা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে খেলোয়াড় লিওনেল মেসির দায়িত্ব নেওয়া হলো।’
আর এই কথার নিচে সাক্ষর করেছিলেন রেক্সাস, মিনগুয়েলা ও গ্যাগিওলি। এর সপ্তাহখানেক পর নোটারির মাধ্যমে সে চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করেন রেক্সাস ও গ্যাগিওলি। সেই কাগজটিই সযতনে সংরক্ষণ করছিলেন গ্যাগিওলি। যেটি মেসিকে দেয়া বার্সার পক্ষ থেকে প্রথম কমিটমেন্ট।
হোরাসিও গ্যাগিওলি চেয়েছিলেন ন্যাপকিন পেপারটি বার্সেলোনার জাদুঘরে সংরক্ষণ করতে। অনেকেই চেয়েছিলেন, লাল লাখ ডলারের বিনিময়ে তার কাছ থেকে কাগজটি পেতে। কিন্তু গ্যাগিওলি বলেছেন, ‘বার্সার জাদুঘরে এই ন্যাপকিন সংরক্ষণ করা উচিত। ক্লাবটির আধুনিক ইতিহাস পাল্টেছে ওই এক টুকরো ন্যাপকিন।’ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, গ্যাগিওলি সেই ন্যাপকিন কাগজটি সম্পর্কে নিজের মত পরিবর্তন করেছেন। জাদুঘরে রাখার পরিবর্তে নিলামেই তুলতে যাচ্ছেন তিনি।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪ | সময়: ৭:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ