সর্বশেষ সংবাদ :

বাগমারায় ফসলি জমিতে ফের পুকুর খননের মহোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা : পুকুর খননের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও অভিযান পরিচালনা সত্বেও প্রশাসনসহ পুকুর খনন নিয়ন্ত্রনকারী সকল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার হুদির বিলে ফের শুরু হয়েছে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব।
এছাড়াও মাড়িয়া ইউনিয়নের গাঙ্গপাড়া মহিষার বিলে পুকুর খননে বাধা দেয় গ্রামের লোকজন। রোববার বিকেলে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ লাঠি-শোঠা নিয়ে পুকুর খননকারিদের ধাওয়া করে। এ সময় তারা মেশিন ফেলে পালিয়ে যায়। এলাকায় পুকুর খনন করে দেওয়ার জন্য ৮/১০ জনের একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা পুকুরের আকার আকৃতি, বছরে কয়টি ফসল হয়, পুকুর খননের মাটি অন্যত্র বিক্রি ও স্থানান্তরের সুবিধা আছে কিনা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা চুক্তির বিনিময়ে পুকুর খননে সহযোগিতা করে থাকে।
তাদের রয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন শাখা প্রশাকায় অন্তরঙ্গ দহরম মহরম সম্পর্ক। যে কারণে পুকুর খননকারীরা দিনে দুপুরে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করে খননকৃতমাটি অন্যত্র বিক্রি করতে কাউকে তোয়াক্তা করছে না। এভাবে যত্রতত্র ও লক্কর জক্কর কাঁকড়া নামধারী ভাঙ্গাচোরা ট্রাকটরে করে মাটি পরিবহনের ফলে সরকারের নতুন নতুন রাস্তা ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
এভাবে মাটি পরিবহন করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা ভেঙ্গে একাকার হলেও এখানে মোটা অংকের টাকার সুবিধা পাচ্ছে কথিপয় দালাল, ইউএনও অফিসের দু’একজন কর্মকর্তা- কর্মচারী ও থানার কথিপয় দারোগা।
এদিকে অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে উপজেলা ভুমি অফিস থেকে একাধিক মামলা ও অভিযোন পরিচালনা করেও রহস্যজনক কারণে বন্ধ করা যাচ্ছে না পুকুর খনন কার্যক্রম। খননকারীচক্র রাতের আঁধারে চালিয়ে যাচ্ছে পুকুর খনন কার্যক্রম। অবৈধ পুকুর খননের অভিযোগে সম্প্রতি সহকারি কমিশনার (ভুমি) অফিস থেকে রায়াপুর গ্রামের পিতা মৃত লইমুদ্দিনের পুত্র মঞ্জুর রহমান, করখন্ড গ্রামের মুনছুর আলীর পুত্র বিদ্যুত হোসেন ও খাপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের পুত্র আবু হানিফ সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা ভুমি অফিস থেকে একাধিক অভিযান ও জরিমানা আদায় করা হলেও থেমে নেই পুকুর খনন কার্যক্রম।
স্থানীয় গ্রামবাসী ও জমির মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাদোপাড়া মহল্লায় সম্প্রতি প্রায় পঞ্চাশ বিঘার অধিক তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন ওই এলাকার প্রভাবশালীরা। তারা জমির মালিকদের না জানিয়ে এবং তাদের সাথে কোন যোগাযোগ না করে এক রকম জোর পূর্বক জমিগুলো দখল করে সেখানে ভ্যেকু (পুকুর খনন মেশিন) নামিয়ে খনন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
জমির মালিক ইউসুফ সরদার, মকছেদ আলী, সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, তারা হুদির বিলের জমির মালিক। অথচ তাদেরকে কোন কিছু জানিয়ে রাতের আঁধারে ভেঁকু নামিয়ে সেখানে জোর করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তাদের মতে এই খনন কাজে জড়িত রয়েছে শক্তিশালি সিন্ডিকেট চক্র।
এই বাহিনীর হয়ে কাজ করছেন গোয়ালকান্দির রামরামা এলাকার জিল্লুর রহমান, একই এলাকার জাহেদুল মোল্লা, বকুল খরাদীসহ কামারখালি এলাকার রফাতুল্যা ও মাহাবুর রহমান সরকারসহ ৮/১০ জনের একটি সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে এলাকায় নারী ও মাদক ঘটিত একাধিক অভিযোগও রয়েছে। তারাই এখন সিন্ডিকেট গড়ে তুলে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির কাজে জমির মালিকদের জিম্মি করে পুকুর খনন চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সিন্ডিকেট চক্রের নেতৃত্বে গোলালকান্দি ও আশেপাশের এলাকায় আরো ১০/১২ টি পুকুর খনন কাজ চলমান রয়েছে। তবে প্রশাসন এদের ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার। স্থানীয়রা বলছেন, এখানে পুকুর খননে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে প্রচার চালানো হলেও রহস্যজনক কারণে রাতের আঁধারে চলেছে পুকুর খননের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর ফলে একদিকে সরকারি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে সেই সাথে রাস্তায় মাটি পড়ে সামান্ন বৃষ্টিতেই সেই রাস্তায় চলাচলা অনুপযোগি হয়ে বাড়ছে জনদূর্ভোগ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, কোন ভাবেই সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন করা যাবে না। মাটি পরিবহনের ওইসব যানবাহন সম্পর্ণ অবৈধ। মাটি বহনের এসব ট্রাকের চলাচল বন্ধে এর আগেও আমরা নোটিশ প্রদান করেছি।
জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে ফসলী জমিতে পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে জমির মালিক ইউসুফ আলী জানান, আমাদের কোন কিছু না জানিয়ে রাতের আঁধারে তারা পুকুর খনন করছে। এভাবে পুকুর খনন বন্ধ করার জন্য আমরা ইউএনও অফিসে আবেদন করার উদ্যোগে নিয়েছি। এ বিষয়ে পুকুর খননকারী চক্রের মূল হোতা জিল্লুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) সুমন চৌধুরী বলেন, শুধু ভবানীগঞ্জ পৌরসভা নয়। গোটা উপজেলাতে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পুকুর খনন বন্ধে চলতি মাসে একাধিক অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আবারও কেউ পুকুর খননের দুঃসাহস দেখালে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ | সময়: ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ