প্রচারণায় নানামুখী উদ্যোগ : সর্বজনীন পেনশনে ১৮ হাজার মানুষ

সানশাইন ডেস্ক: সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। শুরুতে সর্বজনীন পেনশনে যে হারে মানুষের সাড়া পাওয়া গিয়েছিল, পরবর্তীসময়ে সেই হার কিছুটা কমেছে। প্রথম মাসেই যেখানে ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করে, পাঁচ মাস পর সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজারের কিছু বেশি।
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতি বিভাগে কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাসহ সব জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সবাইকে নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রথম কর্মসূচি পালন করা হবে সিলেট বিভাগে।
প্রতি বিভাগে কর্মসূচি পালন করার পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার থেকে নিবন্ধন করার সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। যারা অনলাইনে প্রবেশ করে নিবন্ধন করতে পারেন না, তারা ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে সেখানকার কর্মীদের সহায়তায় নিবন্ধন করতে পারবেন। এজন্য একটি সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ধারা বিবরণীতে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে জিঙ্গেল। সেই সঙ্গে কল সেন্টারও চালু করা হয়েছে।
গত বছরের ১৭ আগস্ট প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পরই আবেদন শুরু হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর পেরিয়ে গেছে ৫ মাস। এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের কিছু বেশি মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে ২৬ কোটি টাকার ওপরে চাঁদা পরিশোধ করেছেন। চাঁদা বাবদ জমা পড়া টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০ কোটি। প্রথমদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করে যে হারে মানুষ চাঁদা জমা দিয়েছেন, ধীরে ধীরে তার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। আবার সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জমা পড়া চাঁদার টাকা বিনিয়োগের একটি নীতিমালা করার কথা থাকলেও এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি।
প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা- এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন চালু করেছে সরকার। উদ্বোধনের পর প্রথমদিনই অর্থাৎ ১৭ আগস্ট নিবন্ধন সম্পন্ন করে ১ হাজার ৭০০ জন চাঁদা পরিশোধ করেন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন। প্রথম এক সপ্তাহে চাঁদা পরিশোধ করেন ৮ হাজার ৫৫১ জন এবং তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর প্রথম এক মাস শেষে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৯ জন এবং তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
এখন পাঁচ মাস পর ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশনে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৫০ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ১১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রথম মাসে যে পরিমাণ মানুষ চাঁদা জমা দিয়েছে, পরবর্তী চার মাসে চাঁদা জমা দেওয়া মানুষের সংখ্যা তার অর্ধেকেরও কম। অবশ্য শুরুর মতো এখনো চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। জমা পড়া চাঁদার অর্ধেকের বেশিই দিয়েছেন তারা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৭ হাজার ৫৯২ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ১৪ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে এখনো পর্যন্ত যে চাঁদা জমা পড়েছে তার ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা।
এখন বিপিএলের ধারাবিবরণীতে আমরা প্রচার করছি। জিঙ্গেল করেছি। বিপিএলের রেডিওতে যে ধারাবিবরণী হয়, ওখানে আমাদের কর্মসূচি প্রচার হচ্ছে। আমরা বিভাগভিত্তিক কর্মসূচি নিয়েছি। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের প্রতিনিধিসহ সব জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সবাইকে নিয়ে প্রত্যেক বিভাগে সভা হবে। প্রথম হবে সিলেট বিভাগে। আমরা কল সেন্টার চালু করেছি।
চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিরা। তাদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৭ হাজার ৫৭৩ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৯ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ মোট চাঁদার ৩৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ এসেছে এই স্কিমের মাধ্যমে।
যাদের বর্তমান আয়ের সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা তাদের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এই স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ২ হাজার ৫৬৭ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। মোট জমা হওয়া চাঁদার ৩ দশমিক ২০ শতাংশ এসেছে এই স্কিমের মাধ্যমে। এই স্কিমের মাসিক চাঁদার হার ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার।
সর্বজনীন স্কিম গ্রহণকারী প্রবাসীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও, এ পর্যন্ত তারা ২ কোটি টাকার ওপরে জমা দিয়েছেন। বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস স্কিম। এ স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা দিয়েছেন ৫১৮ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মোট জমা পড়া চাঁদার ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ এসেছে এ স্কিমের মাধ্যমে।
জমা পড়া চাঁদার টাকা বিনিয়োগের পরিমাণ এবং বিনিয়োগ নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, এরই মধ্যে আমরা ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। বিনিয়োগ নীতিমালা লেজিসলেটিভে যাবে এখন, কাজ চলছে।
প্রথমদিকে মানুষ যে হারে নিবন্ধন করেছে, পরবর্তীসময়ে নিবন্ধনের হার তার তুলনায় কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমদিকে কেউ হয়তো চিন্তা করছে আমি এখনই হবো, তখন মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। একটা ম্যাচিউরড জায়গায় যেতে একটু সময় লাগে। আমরা আশা করছি শিগগির এটার একটা মোমেনটাম হবে।
‘তারপরও প্রায় ২০ হাজার লোক এই প্রটেকশনের আওতায় এসে গেছে। এটা বাড়বেই। না বাড়ার কোনো কারণ নেই। তার কারণ এখানে আর কোনো অপশন নেই। সামাজিক নিরাপত্তায় এরচেয়ে আর কোনো ভালো জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই। আসতেই হবে এবং আসবে মানুষ।’ ‘তারপরও প্রায় ২০ হাজার লোক এই প্রটেকশনের আওতায় এসে গেছে। এটা বাড়বেই। না বাড়ার কোনো কারণ নেই। তার কারণ এখানে আর কোনো অপশন নেই। সামাজিক নিরাপত্তায় এরচেয়ে আর কোনো ভালো জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই। আসতেই হবে এবং আসবে মানুষ।’
প্রচারণা কিছুটা কম হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রচারণা আমরা আরও বেগবান করেছি। এখন বিপিএলের ধারাবিবরণীতে প্রচার করছি। জিঙ্গেল করেছি। বিপিএলের রেডিওতে যে ধারাবিবরণী হয়, ওখানে আমাদের কর্মসূচি প্রচার হচ্ছে। আমরা বিভাগভিত্তিক কর্মসূচি নিয়েছি। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের প্রতিনিধিসহ সব জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সবাইকে নিয়ে প্রত্যেক বিভাগে সভা হবে। প্রথম হবে সিলেট বিভাগে। আমরা কল সেন্টার চালু করেছি।
তিনি বলেন, যারা নিজেরা অনলাইনে ঢুকে নিবন্ধন করতে পারে না, তাদের জন্য ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে নিবন্ধনের সুযোগ করা হবে। ডিজিটাল সেন্টারে গেলে তারা নিবন্ধন সম্পন্ন করে দেবে। ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে তারা বেতনভুক্ত না, তারা হলো উদ্যোক্তা। এজন্য আমরা ন্যূনতম একটা ফি নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবো। যাতে তারা আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়। নানামুখী প্রচেষ্টা চলছে।
সিলেটে কর্মসূচি কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো চূড়ান্ত করিনি। তবে শিগগির সিলেট বিভাগে কর্মসূচি পালন করা হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনারের নমিনি পেনশন স্কিম গ্রহণকারীর ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৪ | সময়: ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ