সর্বশেষ সংবাদ :

আচরণবিধি ভেঙে রাজশাহীতে ভোটের প্রচারে শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার : কড়া নির্দেশনা থাকলেও রাজশাহীর বিভিন্ন আসনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার প্রচারে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা। বিষয়টি নজরে এলে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি ইতিমধ্যে কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। তারপরও শিক্ষকেরা ভোটের প্রচার থেকে সরে আসছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক দাবি করেছেন, চাপে পড়ে তাঁরা ভোটের প্রচারে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
সবচেয়ে বেশি শিক্ষক ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায়। ভোটের প্রচারে যাওয়া এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদেও রয়েছেন। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও তিনি আওয়ামী লীগের পদে থেকে অংশ নিচ্ছেন নৌকার প্রচারে।
এ জন্য রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ লুনা ফেরদৌস তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি ও চাকরিবিধি লঙ্ঘন করায় তাঁর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ করা হবে না, তা ২৮ ডিসেম্বর সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। মোজাম্মেল হক এ আসনে নৌকার প্রার্থী ও দুইবারের সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারার পক্ষে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, কলেজের কার্যালয়কে তিনি নৌকার অফিস হিসেবেও ব্যবহার করছিলেন বলে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কারণ দর্শানোর চিঠিতে বলা হয়।
এদিকে গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল রাজু উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্বে থেকে নির্বাচনী কাজে যুক্ত হচ্ছেন। গোদাগাড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মইনুল ইসলামও আছেন সহসভাপতির পদে। তিনিও নৌকার প্রার্থীর প্রচারের জন্য বাসুদেবপুর দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন পরিচালনার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। তিনিও নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে একাধিক সমাবেশ করেছেন। প্রেমতলী সুকবাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও গোদাগাড়ী পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ পরভীন; পিরিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল আলম তোতাকে মাটিকাটা ইউনিয়নে নৌকার নির্বাচনী সভায় একটি স্কুলের কক্ষে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা গেছে।
গত ২১ ডিসেম্বর গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আকবর আলী। তিনি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে মঞ্চে বসে ছিলেন। সেখানে ছিলেন সুলতাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক।
এ ছাড়া প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাহমুদুল হাসান হিরো, সোনাদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাইনুল ইসলাম, পাকড়ি ইউপির চেয়ারম্যান ও সহকারী শিক্ষক জালাল উদ্দিন, হরিণবিস্কা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন।
তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার তানোর সরকারি আব্দুল করিম সরকার কলেজের প্রভাষক। তিনিও সব সময় নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে থাকছেন। গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগর ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও হুজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ নির্বাচনী লিফলেট বিতরণসহ ফেসবুকে নৌকার ভোট চেয়ে প্রচারে মেতে আছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অবশ্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
সুলতানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক নাজমুল হককেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত রোববার বিকেলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলম কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছেন। বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কলেজের অধ্যক্ষ একইসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান তিনি ভোটের প্রচারে অংশ নিয়েছেন।
নৌকার প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মজিবর রহমান বলেন, ‘আমাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আর যাচ্ছি না। আইন মেনেই চলতে চাই।’ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক শিক্ষক দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের পদে থাকার কারণে নৌকার পক্ষে কাজ করতে তাঁকে চাপ দেওয়া হয়েছে। কে চাপ দিয়েছে, তা অবশ্য এই শিক্ষক বলতে চাননি।
রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, ‘কোনো শিক্ষক নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারবেন না। এটা চাকরিবিধির যেমন লঙ্ঘন, তেমনি নির্বাচনী আচরণবিধিরও লঙ্ঘন। আমাদের অনুসন্ধান কমিটি সজাগ রয়েছে। কোথাও এমন দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ | সময়: ৭:১২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ