বাগমারায় বাড়ছে উত্তেজনা, নৌকা সমর্থকদের বেপরোয়া আচরণ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে নৌকা প্রার্থী ও তার সমর্থকদের দাপটে ও উচ্ছৃঙ্খল কার্যকলাপে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে যে কোনো সময় সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তার শঙ্কার কারণে দুই প্রার্থীর জন্যই গানম্যান বরাদ্দ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ আসনে চরম সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এলাকার টানা তিনবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। কিন্তু এবার নির্বাচনে এলাকায় তার তেমন পোস্টারই নেই। গোটা এলাকায় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পোস্টার। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এমপি এনামুল হক বলছেন, দিনে পোস্টার টানালে রাতেই তা খুলে নিয়ে যান নৌকার সমর্থকেরা। ফলে এলাকায় তার কোনো পোস্টার থাকছে না। এনামুলের অভিযোগ, এলাকায় রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টি করেছেন নৌকার সমর্থকেরা। ফলে ভোটারদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথায় নৌকার সমর্থকরা নানা ধরনের তান্ডব চালাচ্ছেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের প্রার্থী এনামুল হকের এ কথার সত্যতা পাওয়া গেছে উপজেলা গোয়ালকান্দি ও শ্রীপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে। এ দুটি ইউনিয়নের কোথাও এমপি এনামুলের কাঁচি প্রতীকের পোস্টার নেই। শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বললেন, ‘হামারেক এলাকায় তো খালি নৌকার পোস্টারই দেকিচ্চি। কাঁচি মার্কা একবার পোস্টার টানিয়ে গেছিল। একুন তো সেসব দেকিচ্চি না। মুনে হয় কেউ আবার খুইলি লিইয়ি গেলছে। নৌকার লোকজন বুলিছে, নৌকা ছাড়া কুনু কথা হোবি ন্যা।’
এ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তিনি তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর এনামুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০৮ সাল থেকে পর পর তিনবার তিনি দলের মনোনয়নে এমপি হয়েছেন। এবার মনোনয়ন পাননি।
সবশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেঁউখালী গ্রামে নৌকার সমর্থকদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারীসহ চারজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- এমপি এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমান, সমথর্ক গোলাম মণ্ডল, আয়ুব আলী ও শরিফ উদ্দিন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এমপি এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন কাঁচি মার্কার পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। এ সময় গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার, তার ছেলে শাওনসহ ৩০-৪০ জনের একটি দল কাঁচি প্রতীকের সমর্থকদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে গেলেও তা নেওয়া হয়নি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এমপি এনামুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্দেশেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। যার জনপ্রিয়তা বেশি, ভোটারেরা তাকে বেছে নেবে। কিন্তু গোটা উপজেলাজুড়ে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। প্রচারণা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আমার অন্তত ৪০ জন নেতকর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হামলার ঘটনা ঘটছেই। এ কারণে কয়েকটি ইউনিয়ন ও তাহেরপুর পৌর এলাকায় এ পর্যন্ত কোনো পোস্টারই লাগানো যায়নি।
এনামুল হক বলেন, ‘আমি এ আসনের ১৫ বছরের এমপি। জেএমবি-সর্বহারা মুক্ত করে অশান্ত বাগমারাকে আমি শান্ত করেছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সব সময় মিশেছি। কখনো গানম্যান রাখার প্রয়োজন মনে করিনি। এবার নির্বাচনে আমাকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে। আমি এসব চাই না। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারে, এটাই চাই। আমি অশান্তি চাই না। তাই এ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছ থেকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ পাইনি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বারবার কারণ দর্শানোর নোটিশ পেলেও সতর্ক হননি।’
নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তিনি (এমপি) আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনছেন, সেগুলো সঠিক নয়। কোথাও পোস্টার টানাতে বাধা দেওয়া হয়নি। রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বাগমারায় উত্তেজনা রয়েছে। সে জন্য দুই প্রার্থীর সঙ্গেই গ্যানমান দেওয়া হয়েছে। পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দায়িত্ব পালন করছেন। আমি নিজেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়মিত বাগমারা যাচ্ছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে আমরা সতর্ক আছি।’


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩ | সময়: ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ