রাজশাহীতে দুইদিনে বাজারে উঠেছে ৭ টন নতুন পেঁয়াজ

স্টাফ রিপোর্টার : দামের অস্থিরতার মধ্যে রাজশাহীর বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠার খবর পাওয়া গেছে। রোববার পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন নতুন পেঁয়াজ বাজারে চলে এসেছে বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।
এরমধ্যে দুই দিনেই রাজশাহীর কৃষকরা প্রায় সাত হাজার মেট্রিক টন নতুন পেঁয়াজ বাজারে তুলেছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক মোজদার হোসেন।
রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তিনটি মৌসুমে রাজশাহীতে ২১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখান থেকে পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন।
এর মধ্যে তাহেরপুরী জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ সাত হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে এক লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন, তাহেরপুরী জাতের চারা পেঁয়াজ ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৬০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন এবং গ্রীষ্মকালীন নাসিক এন-৫৩ জাতের এক হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ৩৫ হাজার ১০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উঠবে।
রাজশাহীতে মে মাসে উঠে তাহেরপুরী জাতের চারা পেঁয়াজ। এটি দেশি পেঁয়াজ। এর উৎপাদনই হয় ২ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন।
এই পেঁয়াজকে আবার বীজ হিসেবেও লাগানো যায়। ওই বীজ থেকে যে পেঁয়াজ হয় তাকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ হিসেবে পরিচিত। যা বর্তমানে বাজারে আসছে। এর উৎপাদন হয় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।
দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদে সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সার, উন্নত জাতের বীজ ও নগদ অর্থ প্রদান করায় পেঁয়াজের উৎপাদন এবার বাড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বর্তমানে মুড়িকাটা ও নাসিক এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ বাজারে উঠছে।
“রাজশাহীতে রোববার পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন নতুন পেঁয়াজ বাজারে চলে এসেছে। এর মধ্যে দুই দিনেই রাজশাহীর কৃষকরা প্রায় সাত হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে বাজারে পাঠিয়েছে।”
তিনি বলেন, হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা সময়ের আগেই পেঁয়াজ তুলে বাজারে পাঠাচ্ছে। দুই-একদিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজে বাজার ভরে যাবে। ফলে এতে দামও কমে আসবে।
বাজারে এর মধ্যেই দাম কমতে শুরু করেছে জানিয়ে মোজদার হোসেন বলেন, “রোববার রাজশাহীর খুচরা বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। একদিনের ব্যবধানে সোমবার সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
তিনি বলেন, রাজশাহীর প্রায় ৩০ লাখ মানুষের দৈনিক ৩০ গ্রাম করে পেঁয়াজের চাহিদা ধরা হয়। এতে জেলায় দৈনিক পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৯০ মেট্রিক টন।
“সারা বছরে চাহিদা হয় ৩২ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। আর জেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন হয় প্রায় ৪ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। এটি জেলার চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৩ গুণ বেশি।”
কৃষি কর্মকর্তা মোজদার হোসেন বলেন, “জেলায় উদ্বৃত্ত থাকে ৩ লাখ ৯২ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। রাজশাহীর সারা বছরের চাহিদা মিটিয়ে এই পেঁয়াজ আমরা দেশের ১৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে একদিন খাওয়াতে পারব।”
পেঁয়াজের বাজারে অভিযান : এদিকে রাজশাহীতে পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সোমবার দুপুরে নগরীর সাহেববাজার কাঁচাবাজারে এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মাসুম আলী জানান।
তিনি বলেন, অভিযানকালে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর মধ্যে দুইজনকে ৫০০ টাকা করে এক হাজার এবং অপরজনকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পেঁয়াজের অতিরিক্ত লাভ না করে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ