রাজশাহীর মুখরোচক খাবারের ইতিবৃত্ত

স্টাফ রিপোর্টার: ছবির মত স্নিগ্ধ ও পরিপাটি শহর রাজশাহী। দেশের সবচেয়ে নির্মল আর বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেয়ার প্রশান্তি মিলবে প্রমত্তা পদ্মার কোল ঘেঁষা উত্তরের বৃহত্তম এই নগরীতে। গ্রীষ্মের মধুমাসে রাজশাহীর রসালো আম-কাঁঠালের কদর কার না জানা? সুস্বাদু ফলফলাদির বাইরেও ভোজনপ্রেমীদের মাতিয়ে রাখার জন্য রাজশাহী শহরজুড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য অসংখ্য রেস্তোরাঁর সমাহার।
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা উঠলে যে কারো মুখেই প্রথমে আসবে কলাই বা কালাই রুটির নাম। মাষকলাই আর আতপ চালের আটা বা ময়দায় তৈরি এই রুটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাজশাহীর মানুষের সকাল-বিকালের নাস্তার প্রথম পছন্দ হিসেবে টিকে আছে। বিভিন্ন প্রকার ভর্তা-ভাজির পাশপাশি মাংস, ভুঁড়ি বা বট দিয়ে কলাই রুটির স্বাদ যে কারো জিভে জল আনবেই। কলাই রুটির বিপুল চাহিদার কারণে শহরজুড়ে শুধু এই রুটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বেশকিছু রেস্তোরাঁ যেখানে মূল রেসিপি ঠিক রেখে কারিগরেরা ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সংমিশ্রণে আপ্যায়ন করে যাচ্ছেন ভোজনরসিকদের।
রাজশাহী শহর এবং বিভাগজুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মিষ্টির দোকান। এসব মিষ্টির যেমন বাহারি নাম তেমনি নামকরণের পেছনে রয়েছে দারুণ সব গল্প। রানা মিষ্টি ঘরের গরম মিষ্টি আর তেলে ভাজা লুচি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কমলাভোগ, রসকদম আর মণ্ডা, নবরূপের চমচম আর রসগোল্লা, জিরোপয়েন্টে বাটা’র মোড়ের জিলাপী, বর্ণালী মোড়ের তিলের জিলাপী – মিষ্টান্নের প্রতি যাদের দুর্বলতা আছে তাদের জন্য রাজশাহীতে নিঃসন্দেহে অপেক্ষা করছে দারুণ সব আকর্ষণ।
এই অঞ্চলের মানুষের বিরিয়ানি প্রীতির কথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। হালের বিভিন্ন রেস্তোরাঁর কল্যাণে নগরবাসীর মধ্যে কাচ্চি আর হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে। কাচ্চি ভাই বা গ্র্যান্ড রিভারভিউ’র মত রেস্তোরাঁগুলোতে তাই বিরিয়ানির অর্ডার এক কথায় লেগেই থাকে।
এছাড়াও অ্যারো স্পুন, নানকিং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, অ্যারাবিয়ান কিচেন, নর্থ বার্গ, ক্লাব হাউজ, হাংরি হিরোজ, আজিজ ক্যান্টিন বা উনানসহ বিভিন্ন রেস্তোরাঁর মুখরোচক সব ডিশ এখন রাজশাহী শহরের স্থানীয় ও ভ্রমণকারী সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। রেস্তোরাঁয় এসে খাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই অনলাইনে অর্ডার বা টেকঅ্যাওয়ে’র সুবিধা নিতে আজকাল আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রাজশাহী শহরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে অনলাইন ফুড ও গ্রোসারি ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ফুডপ্যান্ডা। এ যাবত প্ল্যাটফর্মটির সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ ও হোম শেফ। প্রতিদিন প্ল্যাটফর্মটির রাইডাররা ভোজনরসিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের পছন্দের খাবার।
অনলাইন ফুড ও গ্রোসারি ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে রাজশাহীতে তরুণদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে রাজশাহীর একটি সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত মোখলেসুর রহমান বলেন, গত এক বছর যাবৎ প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে ফুডপ্যান্ডা’য় খাবার ডেলিভারির কাজ করে যাচ্ছি। এতে পড়াশোনা পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করতে পারছি। ২৩ বছর বয়সী মোখলেসুরের মত অনেকেই তাদের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে উপার্জনের জন্য এখন এই পেশার সাথে যুক্ত হচ্ছেন। নগরবাসীর রসনাবিলাসের আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকায় রেস্তোরাঁগুলোও এখন আগের চাইতে আরো বেশি সক্রিয়ভাবে ফুডপ্যান্ডার মতো প্ল্যাটফর্মে নিজেদের বিপণন কাজ চালাচ্ছে। ফলে ডেলিভারি রাইডারদের কাজের সুযোগ বাড়ছে।

 


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৩ | সময়: ৬:৫১ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর