২৫তম জাতীয় ক্রিকেট লীগ: রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ হাসি রাজশাহীর

আব্দুল্লাহ আল মারুফ:

তৃতীয় দিনের খেলা শেষ! রাজশাহীতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ১৬৯ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বরিশালের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১১১! শেষ দিনের হাতে সব রোমাঞ্চ তুলে দিয়ে গতকাল যখন ড্রেসিং রুমে ফিরছিলেন দু’দলের খেলোয়াররা, তখন কামারুজ্জামান কাননে (শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্টেডিয়াম, রাজশাহী) উপস্থিত সকলের মুখে কেবল প্রশ্ন আর প্রশ্ন! ‘ঘরের মাঠে তাইজুল-অন্তর-নাহিদরা কি পারবে ৫৮ রানের মধ্যে বরিশাল বিভাগের শেষ চারটি উইকেট তুলে নিতে? রাজশাহী কি পারবে, খুলনার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের লজ্জাজনক হারের পর ঘুরে দাঁড়াতে? ওরা কি পারবে, এই ম্যাচ জিতে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিতে? নাকি, বরিশালের ইফতেখার-অনিক-রাব্বিরা রাজশাহীর বোলারদের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াবেন এবং অবশিষ্ট ৫৮ রান করে স্বাগতিকদের টানা হারের লজ্জায় ফেলবেন?

 

 

পারেনি বরিশাল, পারেনি রাজশাহীর বোলারদের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে, পারেনি রাজশাহীকে টানা হারের লজ্জায় ফেলতে! বরং কামারুজ্জামান কাননে শেষদিনের সকালে শোভা ছড়িয়ে গেছেন নাহিদ সানজামুল অন্তর-রা! আর সে শোভার কল্যাণেই রাজশাহী পেয়েছে ৯ রানের মহাকাব্যিক, মহাগুরুত্বপূর্ণ এক জয়! মহাকাব্যিক-ই তো! প্রথম ম্যাচে ৪০০ রানে হারের পর একটা দলের এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোকে তো মহাকাব্যিক-ই বলা যায়! ১৬৯ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করা একটা দল যখন ১ উইকেট হারিয়ে ৫১ রান তুলে ফেলেছে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাওয়া জয়টাকে তো মহাকাব্যিক-ই বলা ভালো!

 

 

১৯ অক্টোবর থেকে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া এই ম্যাচে টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বরিশাল অধিনায়ক! অধিনায়কের নেওয়া সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমান করতেই যেন ম্যাচের শুরু থেকেই বল হাতে দুর্দান্ত প্রতাপ দেখান বরিশালের তানভীর ইসলাম! ফলে প্রথমে ব্যাট করা রাজশাহী মাত্র ৮৭ রানের মধ্যে প্রথম সারির ৪ ব্যাটারকে হারিয়ে বিপদে পরে! এ অবস্থায় শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন সাব্বির রহমান ও মেহেরব অহিন। দু’জনেই পেয়ে যান অর্ধশতক। এ দু’জনের ব্যাটে ভর করে যখন বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিলো রাজশাহী, তখনই তানভীরের সাথে উইকেট শিকারে যোগ দেন সোহাগ গাজী! ফলে অর্ধশতকের পরপরই ফিরতে হয় সাব্বির ও অহিনকে। আর এ দু’য়ের বিদায়ে রাজশাহীও গুটিয়ে যায় ২০৯ রানে! সাব্বির ৫৭ এবং অহিন ৬৫ রান করেন। তানভীর ৫টি এবং সোহাগ গাজী ৪ উইকেট লাভ করেন।

 

 

রাজশাহীর প্রথম ইনিংসের জবাবে বরিশালও তাদের প্রথম ইনিংস দীর্ঘায়িত করতে পারেনি। নবাগত নাহিদ রানার ৪ উইকেট পাওয়ার দিনে বরিশাল তাদের প্রথম ইনিংসে সবক’টি উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২৩৩ রান!

 

 

২৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে রাজশাহী। রাজশাহীর দ্বিতীয় ইনিংসেও যেন নিজেকে প্রমানে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন বরিশালের তানভীর! তানভীরের সাথে যোগ দেন রুয়েল মিঞা! আর এ দু’ইয়ের দাপটে আবারও ব্যর্থ হয় রাজশাহীর ব্যাটাররা! তবে এ ব্যর্থতার মধ্যেই আশার আলো জ্বালিয়ে রাখেন সাব্বির হোসেন ও প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক করা অহিন। সাব্বিরের ৫২ এবং অহিনের ৪৫ রানে ভর করে শেষ পর্যন্ত রাজশাহীর সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯২! ফলে বরিশালের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৯ রান! তানভীর ৪ এবং রুয়েল ৩টি উইকেট লাভ করেন।

 

 

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বরিশালের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া! ১ উইকেটে ৫১ রান তুলে তারা হয়তো তখন জয়ের মধুর স্বপ্নও বুনছিলো! তবে সে স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করার দ্বায়িত্ব নেন রাজশাহী কাপ্তান তাইজুল। তাঁর দুর্দান্ত স্পিন ভেলকিতে ১ উইকেটে ৫১ থেকে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১০১! পরবর্তীতে আর কোন উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে আরো ১০ রান যুক্ত করে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে বরিশাল! ফলে আজ শেষ দিনে তাদের দরকার ছিলো আরো ৫৮ রান, পক্ষান্তরে রাজশাহীর ৪ উইকেট!

 

গতকাল থেকেই রাজশাহীর একমাত্র বাধার নাম হয়ে ছিলেন বরিশালের ওপেনার ইফতেখার হোসেন! তাইজুল অন্তর নাহিদরা সব হিসাব মেলাতে পারলেও ইফতেখারের হিসাবটাই মেলাতে পারছিলেন না। ফলে পরাজয় যেন উঁকি দিচ্ছিলো ক্ষণে ক্ষণে! তবে আজ শেষ দিনের শুরুতেই ইফতেখারের হিসাব মিলয়ে দেন অভিজ্ঞ সানজামুল! ইফতেখারের বিদায়ের পর পরই বরিশালকে জয় হতে ৯ রান দূরে রেখেই গুটিয়ে দেবার বাকি কাজটুকু করেন নাহিদ ও অন্তর। তাইজুল ৪টি এবং নাহিদ ৩টি উইকেট লাভ করেন। এছাড়া অন্তর নেন ২টি উইকেট। বরিশালের ইফতেখারের সংগ্রহ ৬০ রান!

 

প্রথম ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ ২০ রান করার পাশাপাশি ২টি উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রাজশাহীর অধিনায়ক তাইজুল ইসলাম।

সানশাইন / শাহ্জাদা


প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩ | সময়: ৫:০৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine