বরখাস্ত হয়েও বহাল তবিয়তে পুঠিয়ার সেই মাদ্রাসা অধ্যক্ষ 

স্টাফ রিপোর্টার: নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে চাকুরীকালীন হয়েছেন একাধিকবার বরখাস্ত। তসরুপ করেছেন চাকুরীরত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কোষাগার। ঘষামাজা করেছেন প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। তবুও বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী দারুস সুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষর দায়িত্বপালন করছেন তিনি। ইতোমধ্যে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলেও অজ্ঞাত কারণে এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার তদবিরে তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

তদন্ত প্রতিবেদন ও কাগজপত্র অনুসন্ধান করে জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সময় প্রতিষ্ঠানের নামকাওয়াস্তে কল্যাণ ফান্ডে রাখা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য আনুষঙ্গিক আয় থেকে প্রাপ্ত টাকার হিসাবেও রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ হাবিবুর।

 

অপরদিকে, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো চিঠি ও পুঠিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদ গঠন সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য চলতি বছরের ২০ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো নির্দেশনাপত্রের আলোকে গত ৫ জুন মাদ্রাসায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত কমিটি।

 

তদন্ত কমিটি আরো জানতে পারেন, ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর স্থানীয় সাংসদ প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান সভাপতি হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীকে সভাপতি মনোনয়নের জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিও লেটার দেন। কিন্তু অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সেই ডিও লেটার গোপন করেন এবং তৎকালীন সভাপতির স্বাক্ষর ঘষামাজা করে নিজের পছন্দ মতো ৩ জন ব্যাক্তির নাম প্রস্তাব করে পাঠান। তার প্রেক্ষিতে দেওয়ান আব্দুস সালেককে সভাপতি মনোনয়ন দেন যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগে থেকে অবগত ছিলেন না। এমনকি পূর্বের কমিটির সভাপতি এবং মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ৩ জন সভাপতি ও ৩ জন বিদ্যোৎসাহী প্রতিনিধির নাম মনোনয়ন প্রদানের জন্য আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর যে আবেদন করেন; অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সেটি গোপন করে কাগজপত্র ঘষামাজা করে পুণরায় সভাপতি হিসেবে তাঁর পছন্দমতো ৩ জন ব্যাক্তির নাম গোপনে উপচার্য বরাবর প্রেরণ করেন।

 

পুঠিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা আখতার জাহান বলেন, অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। ইতোপূর্বে একাধিকবার বরখাস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফের মাদ্রাসায় গিয়ে দায়িত্বপালন করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত আছেন।

 

তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে সভাপতির পদ সহ অন্যান্য পদ বিধি মোতাবেক হয়নি বলে তদন্ত কমিটি মতামত দিয়েছেন।

 

এদিকে, অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সাময়িক বহিস্কারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাকে বিধি বহির্ভুত ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ফলে পুণরায় আমাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন।

 

সেচ্ছাচারিতা ও আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান কোনো মন্তব্য না করে প্রসঙ্গটি কৌশলে এড়িয়ে যান।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৩ | সময়: ৮:৪৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine