শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

স্পোর্টস ডেস্ক: শেষ ২ ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ১২ রান। এর আগে ৮ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পাওয়া শাহীন শাহ আফ্রিদি ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। লং অফে ধনাঞ্জয়াকে তালুবন্দি করানোর পর ওয়েলালাগেকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে ফেরান।
এলোমেলো হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কা শেষ ওভারে মাদুশানকে হারিয়ে আরও বিপদে পড়ে। শেষ ২ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ৬ রান। পঞ্চম বলে আসালাঙ্কার ব্যাটে এজ হয়ে চার! পেসার জামান খান নিস্তব্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বুঝে গিয়েছিলেন ওখানেই সবশেষ! উইকেটে বসে হাত চাপড়াতে থাকেন মাটিতে।
গোটা স্টেডিয়ামে তখন নখ কামড়ানো মুহূর্ত। পেণ্ডুলামে ঝুলছিল ম্যাচ। কে জিতবে বোঝা যাচ্ছিল না।ফাইনালে যেতে শেষ বলে স্বাগতিকদের চাই ২ রান। ব্যাটিংয়ে থাকা আসালাঙ্কা সেই সমীকরণ মিলিয়ে দেন ডিপ স্কয়ার লেগে বল পাঠিয়ে। নাটকীয়তায় শেষ রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচ জিতে ১১ বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। তাদের অপেক্ষায় ভারত। রোববার হবে দুই দলের ফাইনাল।
বৃষ্টির বাধায় নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর শুরু হয় খেলা। বৃহস্পতিবার আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নেয় পাকিস্তান। বৃষ্টিতে ম্যাচ নেমে আসে ৪৫ ওভারে। খেলা শুরু হলেও পাকিস্তান ইনিংসে আবার বৃষ্টির বাঁধা দিলে আরো ৩ ওভার কমিয়ে আনা হয়। ৪২ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুঁড়ে পাকিস্তান। ওই রান তাড়া করতে নেমে ২ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে শ্রীলঙ্কা। বলে রাখা ভালো, শ্রীলঙ্কাই এখন এশিয়া কাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। এবারও তারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।
লক্ষ্য তাড়ায় শ্রীলঙ্কা শুরুতেই কুশল পেরেরার (১৭) উইকেট হারায়। ৫৭ রানের জুটি গড়ে সেই ধাক্কা সামাল দেন পাথুম নিসানকা-কুশল মেন্ডিস। নিসানকা ২৯ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। তাতে লঙ্কানদের কোনো সমস্যা হয়নি। সাদিরা সামারাবিক্রমাকে সঙ্গে নিয়ে কুশল মেন্ডিস এগোতে থাকেন। দুজনে সিঙ্গেলস-ডাবলস নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন। বাবর আজমদের অসহায়ত্ব ফুটে দুজনের দ্যুতি ছড়ানো সাবধানী ব্যাটিংয়ে।
শ্রীলঙ্কা যখন ভালো জবাব দিচ্ছিল তখন পার্ট টাইম বোলার ইফতেখার আহমেদ এসে ব্রেক থ্রু এনে দেন। অফস্পিনারকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়াতে গিয়ে ৪৮ রানে ফেরেন সাদিরা। ভেঙে যায় শতরানের জুটি। সাদিরা ফেরার পর মেন্ডিসের সঙ্গী হন চারিথ আসালাঙ্কা। ইফতেখারকে স্লগ সুইপে দারুণ এক ছয়ে সাবলীল থাকার আভাস দেন এই বাঁহাতি। ওদিকে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কুশল। কিন্তু দলে ফেরা মোহাম্মদ হারিসের দারুণ এক ক্যাচে তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি কুশলের। ৮৭ বলে ৯১ রান করেন তিনি। তার আউটের পর ছন্দ হারায় স্বাগতিকরা। ইফতেখারের তৃতীয় শিকার হন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ফেরেন ৫ রানে।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আসালাঙ্কা জবাব দিচ্ছিলেন পাকিস্তানের বোলারদের। মাথা উচুঁ করে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ছিলেন দারুণ মনোযোগী। তাতেই জয় চলে আসে শ্রীলঙ্কার। জয়সূচক রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৪৭ বলে ৪৯ রান করেন ৩ চার ও ১ ছক্কায়। এই ইনিংস সাজানোর পথে ১০ রানে জীবন পেয়েছিলেন। ইফতেখারের বলে উইকেটের পেছনে তার ক্যাচ ছাড়েন রিজওয়ান।
পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ইফতেখার। ২টি উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১ উইকেট নেন শাদাব খান। এর পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুটা ভালো না হলেও শেষটা সুন্দর ছিল। ফখর জামানকে (৯) দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে শুরুতেই সাজঘরে ফেরান মাদুশান। শুরুতে উইকেট হারানোর পর বাবর আজম-আব্দুল্লাহ শফিকের ব্যাটে প্রতিরোধ পায় পাকিস্তান। রান খরায় থাকা বাবরকে ছন্দে দেখা গেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়ালালেগেকে খোঁচা দিয়ে বাবর (২৯) সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৬৪ রানের জুটি।
পাকিস্তানের অধিনায়ক ফেরার পর এক পাশে আকড়ে ধরে এগোতে থাকেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে পড়ছিল উইকেট। ফিফটি করা ওপেনার শফিক (৫২) ফেরার পর দ্রুত আউট হন মোহাম্মদ হারিস (৩) ও মোহাম্মদ নাওয়াজ (১২)।
এবার শুরু হয় রিজওয়ান-ইফতেখারের শাসন। দুজনে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে যেতে থাকেন চ্যালেঞ্জিং স্কোরের দিকে। ৪৮ বলে ফিফটি করেন রিজওয়ান। ফিফটির পর হাত খুলে খেলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৭৩ বলে ৮৬ রান করে। ৬টি চার ও ২টি ছয়ের মার ছিল রিজওয়ানের ইনিংসে। অন্য প্রান্তে ইফতেখারের ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৪৭ রান। তার আউটে ভাঙে ৭৮ বলে ১০৮ রানের জুটি।
লঙ্কানদের হয়ে বল হাতে দ্যুতি ছড়ান পেসার পাথিরানা। ৬৫ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। এছাড়া মাদুসান ২টি ও ১টি করে উইকেট পেয়েছেন থিকসেনা ও ওয়ালালেগে। ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা কুশল মেন্ডিস পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ | সময়: ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ