মানবিক ইউএনও এর বিদায়ে পবা উপজেলা জুড়ে বেদনার সুর

পবা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লসমী চাকমা যোগদানের মাত্র দুই বছরে বিভিন্ন কর্মকান্ড ও আর্তমানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইতিমধ্যে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। সৎ-সাহস ও সদিচ্ছা থাকলে একদিন কঠিন কাজেও সফলতা অর্জন করা সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে তার কর্মকান্ডে এমন প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে জনগণ আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে খুঁজে নিয়েছেন মমতাময়ী ইউএনওকে। তবে ইতিমধ্যে বদলি আদেশ এসেছে তার। এই উপজেলা ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে হবে তার গন্তব্য। তার বিদায়ে পবা উপজেলা জুড়ে বইছে বেদনার সুর।

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লসমী চাকমা ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর রাজশাহীর পবা উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে পবা উপজেলা প্রশাসনকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজান। উদ্যোগ নেন দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করে একটি আধুনিক জনপদ গড়ে তোলার। তার সততা ও কর্মদক্ষতায় ক্রমান্বয়ে বদলে গেছে উপজেলা প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকান্ডে ফিরে এসেছে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। এক কথায় বলা যায় তিনিই পবায় শান্তি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছেন।

 

 

 

 

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লসমী চাকমা এ উপজেলাকে একটি উন্নত আধুনিক জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। শান্তির লক্ষ্যে তিনি গণশুনানির মাধ্যমে পারিবারিক কলহ-বিবাদ, জমি-জমা, রাস্তাঘাটসংক্রান্ত অসংখ্য বিরোধ নিষ্পত্তি করে জনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। তার কার্যালয় সবার জন্য উন্মুক্ত দ্বার হিসেবে খুলে রেখেছেন। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আদালত পর্যন্ত আর যেতে হচ্ছে না কাউকে।

প্রভাবশালী মহলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সরকারি সম্পত্তির অবৈধ দখল প্রতিরোধে দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেছেন ইউএনও লসমি চাকমা । ফলে পারিলা ইউনিয়নের খড়খড়ি বাজার, কাটাখালিতে এবং আরো কয়েকটি বাজারে অবৈধ উচ্ছেদ করেছেন তিনি।

নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও জনকল্যাণমূলক কাজ করে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে সব শ্রেণিপেশার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং ১২ বছর থেকে উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সীমানা জটিলতায় বন্ধ থাকা নির্বাচন তিনি চালু করে নিরপেক্ষ ও সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করেছেন এবং এটি একমাত্র তার নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণেই সম্ভব হয়েছে। পবা উপজেলায় এত নিরপেক্ষ নির্বাচন অতীতে কোনো দিন হয়নি।

তিনি ভেজালবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও পাবলিক প্যালেসে প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রতিমাসে তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। গাঁজা/মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে হুলিয়া জারি করেছেন। তিনি যুবসমাজকে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। যা অতীতে কেউ পারেনি। শতাধিক বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছেন। এক কথায় সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে এই নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদচারণা।

ইউএনও লসমি চাকমা দাপ্তরিক কাজের বাইরে সকাল-বিকাল ছুটে বেড়া পবা উপজেলার সব প্রান্তে। কথা বলেন সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে। শোনেন তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা। নিয়মিত খোঁজখবর নেন সমাজের অবহেলিত গরিব-দুঃখী মানুষের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “বাংলাদেশ একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” এই নির্দেশনার আলোকে পবা উপজেলায় ক শ্রেণীর ভূমিহীন মোট ৫৩৫ টি পরিবার কে গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে এবং পবা উপজেলা ক শ্রেণীর ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

তিনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসার মান বৃদ্ধিতে তিনি সরজমিনে খোঁজ নিয়েছেন । ফলে ক্লিনিকগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি নওহাটা পৌরসভার বাগধানী-তানোর রাস্তার দুই পাশ্বে সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে ২০০০ তাল গাছ লাগিয়েছেন এবং উপজেলা চত্বরে বিভিন্ন ঔষুধি, কাঠ, এবং ফলগাছ লাগিয়েছেন নিজ উদ্যেগে।

উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর মূরাল নির্মাণ, দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হয়ে উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়ন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন তিনি। তার নজরদারির ফলে পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় নকলমুক্ত পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়েছে।

মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কতৃর্ক জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাইলট উপজেলা হিসেবে পবা উপজেলা নির্বাচিত হয়েছে এর পিছনে অন্যতম অবদান রয়েছে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লসমী চাকমা’র।

পবা উপজেলা মাঠ প্রশাসন কর্মে যার বিশেষ অবদান সে নারী ইউএনও লসমি চাকমা । তার অবদান উপজেলায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে উপজেলার ০৮ ইউনিয়নের সাড়ে ৩ লাখ জনগোষ্ঠীর অভিভাবক হয়ে ওঠা অনেক নারীর পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু তিনি পেরেছেন। সবার মধ্যে হয়ে ওঠা আজ এক অসাধারণ গল্পের মানুষ তিনি। পবা উপজেলায় জনবান্ধব প্রশাসন গড়ায় মহীয়সী এ নারী আজ রাজনৈতিকসহ সর্ব মহলে প্রশংসিত।

 

 

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লসমী চাকমা বলেন, সত্যি কথা বলতে কি আমাদের চাকরির নির্ধারিত কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য নেই, সুনির্দিষ্ট কোনো পরিধি নেই, জনগণকে সেবা দেয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ছকে বাধা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনগণের মঙ্গল হয়, ভালো হয় সেটাই করার চেষ্টা করছি। তবে স্থানীয় এমপি,জেলা প্রশাসক স্যার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষের ঐকান্তিক সহযোহিতায় প্রতিটি কাজ করা সহজ হয়েছে বলে আশা করি। প্রত্যাশা করি প্রধানমন্ত্রীর উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবার সহযোগিতায় প্রতিটি সেক্টরের সমন্বয়ে প্রান্তিক জনগণের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে পবা উপজেলা বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্ব করবে।

সানশাইন/সোহরাব

 


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩ | সময়: ৬:০২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর