সমালোচনার মধ্যে উপজেলা ভোট থেকে সরলেন পলকের শ্যালক

সানশাইন ডেস্ক: নাটোরের সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল। ফলে এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এখন কেবল একজন প্রার্থী আছেন।
রোববার দুপুর ২টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফের কাছে রুবেলের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদনটি জমা পড়ে। সেটি জমা দেন স্থানীয় তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন।
এর আগে সকালে এক ভিডিও বার্তায় ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন রুবেল। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে পলকের নির্দেশের কথা তুলে ধরেন তিনি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিয়ে মিনহাজ উদ্দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী মন্ত্রী ও এমপির নিকটাত্মীয় কেউ উপজেলা পরিষদে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এমন ঘোষণা পর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশে রুবেল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।”
ইউপি চেয়ারম্যান জানান, রুবেল ঢাকায় অবস্থান করছেন বলেই তিনি সেটি জমা দিয়েছেন। আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, “আজ সোমবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদনের শেষ দিন। এই উপজেলায় দুই জন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। দেলোয়ার হোসেন একক প্রার্থী থাকলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। আর তিনিও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে নতুন তফসিল হবে।”
লুৎফুল হাবিব রুবেল সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। গত ১৫ এপ্রিল রাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে রুবেলের বিরুদ্ধে। দেলোয়ার এখনও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রুবেলকে নির্বাচন কমিশনে তলব করা হয়। পরদিন শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকেও তাকে কারণ দর্শাতে করা হয়। নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদেরও প্রার্থী হতে দল থেকে নিষেধ করা হলে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক রুবেলের প্রসঙ্গও আসে। শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেলোয়ারকে দেখে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন সিংড়ার এমপি পলক। পরে রুবেলকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন।
রোববার ভিডিও বার্তায় রুবেল বলেন, “২০০২ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় আছি, ২০০৫ সালে গোল ই আফরোজ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এর পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেছি, বর্তমানে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছি।
“গত ৩ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে পরপর তিন বার নির্বাচিত হই।ৃগত ৮ তারিখে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সাবমিট করি। তারপরে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেটার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। এটা একটা ষড়যন্ত্র।” ভিডিওর শেষে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন রুবেল।
দেশে এখন ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। এবার চার ধাপে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫টিতে ভোট হবে, পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকিগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলায় ৮ মে ভোট হবে।
আইনে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন করতে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৪ | সময়: ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ