বাঘা সোনালী ব্যাংকে চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন ভাতা

নুরুজ্জামান,বাঘা :
বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা জাতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উপহার।’ সাত বছর ধরে আলোচনা চলছিল দেশে একটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। অবশেষে সরকার ঘোষিত সেই ওয়াদা এখন দেশব্যাপী বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় সোনালী ব্যাংক, বাঘা শাখা চারটি স্কিমে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষদের হিসাব নম্বর(একাউন্ট)খুলে দিচ্ছে। এতে অনেকেই সাড়া দিয়েছেন। তবে বিষয়টি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অত্র শাখার ব্যবস্থাপক জনাব মোঃ আতিকুর রহমান।

 

 

 

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সার্বজনীন পেনশন হলো বাংলাদেশ সরকারের অবসরভাতা উদ্যোগের একটি বিশেষ ব্যবস্থা। দেশের কর্মক্ষম সব মানুষকে পেনশন সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার একটি আইন পাশ করেছেন বর্তমান সরকার। একজন ব্যক্তির বয়স ও অবদান হিসাবের উপর নির্ভর করে এই সুবিধার তারতম্য। দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল ২০২৩’ পাস করা হয়েছে। সার্বজনীন পেনশন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। এতে ব্যক্তিপ্রতি (টাকা জমানো) চাঁদার অঙ্ক সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ৫০ বছরের অধিক বয়সীরাও সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর তারা আজীবন পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। প্রাথমিকভাবে এই স্কিমের আওতায় চারটি শ্রেণিকে টার্গেট করা হচ্ছে-(এক) বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী,(দুই) প্রবাসী বাংলাদেশি, (তিন) অ-প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং (চার)অস্বচ্ছল ব্যক্তিসমূহ।

 

 

 

 

 

 

কর্মকর্তারা বলেছেন, অস্বচ্ছল ক্যাটাগরিতে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসরতদের রাখা হবে। তবে তাদের কিভাবে চিহ্নিত করা হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অতি-দরিদ্র হিসেবে সরকারি সুবিধাভুক্তদের এ ক্যাটাগরিতে রাখা হতে পারে। তাদের মাসিক চাঁদার হার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হবে। অ-প্রাতিষ্ঠানিক খাতে রিকশাওয়ালা, হকার, গৃহকর্মী এবং পথে-ঘাটে পণ্যসামগ্রী বিক্রেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অন্তর্ভুক্ত হবেন।

অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য শ্রেনী-পেশার মানুষদের চাঁদার হার সর্বনিম্ন ১,০০০ টাকা থেকে সর্বো”চ ৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্তরা তাদের চাঁদার বিপরীতে সরকার থেকে লভ্যাংশ পাবেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আছে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকরা। প্রাসঙ্গিক আইনে ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হলেও, পরে বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে শর্ত সাপেক্ষে তাদেরকে এর আওতায় আনা হয়। বিধিমালা অনুসারে, ৫০ বছরের অধিক বয়সীরাও সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে অন্যদের মতো ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন সুবিধা পাবেন না তারা। বরং, ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর তারা আজীবন পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। অর্থাৎ, কেউ ৬০ বছর বয়সে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হলে, তিনি ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর ৭০ বছর বয়স থেকে পেনশন সুবিধা পাবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার লক্ষ্য-বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া, সামাজিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।

 

 

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশনে যারা অন্তর্ভুক্ত হবেন, শুরুতে তারা শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে চাঁদার টাকা জমা দেবেন। তবে চাঁদা বা কিস্তি ব্যাংকে সরাসরি অথবা বিকাশ কিংবা নগদ একাউন্ট থেকে এসএমএস এর মাধ্যমেও জমা দেয়া যাবে। এজন্য পেনশন কর্তৃপক্ষ-অর্থ বিভাগ ও সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করেছে। পরে অন্যান্য ব্যাংক এই ব্যবস্থায় যুক্ত হবে। এ জন্য শুরুতে প্রবাসীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে সরকার থেকে জোর প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে, প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিলে চলমান ডলার সংকট পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

 

 

 

 

বাঘা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে তাঁর শাখায় প্রবাস স্কিম(প্রবাসী বাংলাদেশী), প্রগতি স্কিম(বেসরকারি চাকুরিজীবী), সুরক্ষা স্কিম(অ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মী) ও সমতা স্কিম (স্বল্প আয়ের ব্যক্তি) বিষয়ে তথ্য জানা ও হিসাব খোলার ব্যাপারে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এদিক থেকে গতমাসে সর্বপ্রথম এ ব্যাংকে হিসেব খুলেছেন অত্র অঞ্চলের প্রাচীন বিদ্যাপিট রাজশাহী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত বাঘার কৃতিসন্তান তানজিম হাসান স্বদেশ। তিনি বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এতদিন শুধু চাকুরি জীবিরা পেনশন ভাতা পেয়ে আসছেন। এখন থেকে সর্বজনীন শ্রেনী-পেশার মানুষ একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার মাধ্যমে অর্থ জমিয়ে আজীবন পেনশনের আওতায় আসতে পারবে । এটি সি:সন্দেহে এ সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর