বিশ্বকাপে চোখ রেখে সেরা প্রস্তুতির লক্ষ্যে নামছে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপের প্রথম প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সিরিজে স্বাভাবিকভাবেই সেই ম্যাচের কথাই থাকবে ভাবনায়। ধর্মশালায় মুখোমুখি হওয়ার আগে ওয়ানডেতে অন্তত চারবার দেখা হবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের। সম্ভাব্য সেরা উপায়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রতিটি ম্যাচই দুই দলের সামনে নিজেদের কৌশল, স্কোয়াডের গভীরতা, সেরা একাদশ পরীক্ষার সুযোগ। চট্টগ্রামে সেই পথেই হাঁটার মিলছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের প্রস্তুতিতে।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বেলা ২টায় শুরু হবে প্রথম ওয়ানডে। পরের দুই ম্যাচও হবে একই মাঠে। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় মিরপুরের বদলে এই সিরিজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের এই মাঠকে। যেখানে হাই স্কোরিং ম্যাচের আশাই করছে স্বাগতিকরা। সিরিজ শুরুর আগে তাদের শেষ দিনের অনুশীলনে ছিলেন না অধিনায়কসহ পাঁচ ক্রিকেটার। ঐচ্ছিক অনুশীলন হওয়ায় দিনটি বিশ্রামে কাটে নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, নাঈম শেখদের। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা বাকিদের নিয়ে অনুশীলন করলেও এর ব্যাপ্তি অন্য সময়ের মতো তেমন লম্বা ছিল না।
এটুকুতে মনে হতে পারে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি হয়তো হালকাভাবে নিচ্ছে বাংলাদেশ। তাই প্রথম ওয়ানডের আগেও কি না পুরো দমে অনুশীলন করেনি দল। তবে আদতে তা নয়। বরং এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আগে নিজেদের প্রস্তুতি নেওয়ার সেরা মঞ্চ হিসেবে এই সিরিজটিকেই দেখছেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ দলের মঙ্গলবারের ঐচ্ছিক অনুশীলনেও যেন থাকল এর প্রচ্ছন্ন বার্তা। স্পিনার ও থ্রো ডাউনে নেট সেশনের পর ছক্কা মারার অনুশীলনও করেন মুশফিক, সাকিব, তাওহিদ হৃদয়রা। আগের দিন নাঈম, আফিফের নেট সেশনেও ছিল আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ঝাঁজ।
পাশাপাশি সাগরিকার তপ্ত রোদের মাঝেও সেন্টার উইকেটের পাশের নেটে স্টাম্প ভাঙার উৎসবে মাতেন তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদরা। সাম্প্রতিক সময়ে দলের জয়ে নিয়মিতই বড় ভূমিকা রাখা পেসারদের ওপর আস্থার কথা জানান অধিনায়কও। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে বোলারদের চেয়ে ব্যাটসম্যানদের কাজটাই হবে কঠিন, তা জানেন বাংলাদেশ অধিনায়কও।
গত বছর দুই দলের সবশেষ সিরিজে চট্টগ্রামেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলে আফগানরা। প্রথম ম্যাচে স্রেফ ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। সেখান থেকে আফিফ-মিরাজের অবিশ্বাস্য জুটিতে শেষ পর্যন্ত মেলে নাটকীয় জয়। কিন্তু শেষ ম্যাচে আর রক্ষা হয়নি। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবিদের স্পিনে পর্যুদস্ত হয়ে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় দুইশর আগে। পরে রহমানউল্লাহ গুরবাজের দারুণ সেঞ্চুরিতে অনায়াস জয় পায় সফরকারীরা। সেটিই এখন পর্যন্ত দুই দলের শেষ ওয়ানডে। ওই জয়ের সুখস্মৃতি সঙ্গী করেই এবার নতুন সিরিজ শুরু করবে আফগানরা।
মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে সফরকারীদের বোলিং নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশও। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকাপে চোখ রেখে আফগানদের বোলিংয়ের বিপক্ষে কঠিন লড়াই উৎরে সামনের দিনের জন্য ভালো রসদ জোগাড় করার তাগিদ দিলেন অধিনায়ক তামিম। “আমার মনে হয়, এই সিরিজ, এশিয়া কাপ, এরপর নিউজিল্যান্ড সিরিজ যে আছে, এগুলো বিশ্বকাপের সেরা প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ। ওয়ানডে ক্রিকেটে আমরা অনেক দিন ধরেই ভালো খেলছি। এই সিরিজগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিরিজটা এমন দলের বিপক্ষে যাদের বোলিং আক্রমণ খুব ভালো। ওদের সঙ্গে যদি ভালো করতে পারি, তাহলে সামনের দিনগুলোর জন্য সেরা আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে।”
“প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক থেকে গত সিরিজ যেমন ছিল তেমনই থাকবে। কারণ তারা ভালো দল। সাদা বলের ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণগুলোর একটি তাদের। তো গত সিরিজ থেকে কোনো কিছু কম আশা করছি না। আমরা যদি জিততে চাই, অবশ্যই অনেক লড়াই করতে হবে। এমন না যে, মাঠে নেমেই জিতে যাব।”
এই সিরিজের পর শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপেও গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। দুই দলই সুপার ফোরের টিকেট পেলে, আরও বাড়বে মুখোমুখি দ্বৈরথের সংখ্যা। পরে ভারত বিশ্বকাপে ৭ অক্টোবর নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুই দল। তাই বৃহৎ পরিসরে এই ম্যাচগুলো দুই দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে বড় ভূমিকা রাখবে মনে করেন তামিম।
“এটা ভালো যে বিশ্বকাপের আগে এই তিনটি এবং এশিয়া কাপে একটি- মোট চারটি ম্যাচ খেলব। দুই দলের জন্যই এটি একইরকম সুবিধা। দুই দলই প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা বুঝতে পারবে। আমরা যেমন ওদের শক্তি-দুর্বলতা বের করতে চাইব, তেমনি ওরাও আমাদের কী ভালো করছি আর কী করছি না সেটা দেখবে। তো এটা ভালো দিক যে, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষের সঙ্গে তিন-চার ম্যাচ খেলতে পারছি।”
বাংলাদেশ অধিনায়কের মতো একই ভাবনা আফগান দলপতি হাশমতউল্লাহ শাহিদিরও। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানালেন, এই সিরিজ থেকে তামিম, সাকিবদের সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব তথ্য জেনে নিতে চায় তার দল। “বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপেও বাংলাদেশের বিপক্ষে আমাদের একটি ম্যাচ আছে। তো যে দলই জিতবে, এটি তাদেরকে আত্মবিশ্বাস দেবে। ভালো বিষয় হলো, এই তিন ম্যাচ খেলার পর তাদের ক্রিকেটারদের সম্পর্কে এখনের চেয়ে বেশি জানতে পারব আমরা।”
এবারের বাংলাদেশ সফরে একমাত্র টেস্টে পাত্তাই পায়নি শাহিদির দল। ৫৪৬ রানের বিব্রতকর পরাজয় সঙ্গী হয় তাদের। ওয়ানডে সংস্করণেও অতীত পরিসংখ্যানে পিছিয়ে তারা। দুই দলের ১১ সাক্ষাতে বাংলাদেশের জয় ৭ ম্যাচে, ৪টি জিতেছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের মাটিতে আফগানদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। বাংলাদেশে এসে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৪ পরাজয়ের বিপরীতে ৩টি জিতেছেন রশিদ-নবিরা।
এছাড়া সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে ওয়ানডেতে ভালো খেলছে আফগানিস্তান। ২০২১ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ১৮ ম্যাচে ১২ জয়ের বিপরীতে তারা হেরেছে স্রেফ ৫টি। তাই এবার শাহিদির প্রত্যাশাও বেশি। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যত ভালো দলই হোক, আফগান অধিনায়ক সাফ জানিয়েছেন, তার দল ছেড়ে কথা বলবে না। “আমরাও তো এখানে খেলতে ও জিততেই এসেছি! শুধু তাদেরই (বাংলাদেশ) সিরিজ নয় এটা। অবশ্যই তারা ভালো ক্রিকেট খেলছে। তবে আমরাও এখানো ভালো খেলতে ও জিততে এসেছি। গত দুই বছরে আমরাও ভালো করেছি।”
“টেস্টে আমাদের অনেকেই ছিল না। প্রায় আড়াই বছর পর টেস্ট খেলতে নেমেছিলাম। ওয়ানডে আমরা অনেক দিন ধরেই খেলছি। বিশেষ করে গত দুই বছর অনেক ভালো খেলছি। আমরা দলটা গড়ে তুলেছি এবং কাজ এখনও চলছে। প্রতিটি ম্যাচ ধরে আমরা উন্নতি করছি। ওয়ানডে তাই আমরা ভালো দল।” অবশ্য সিরিজের ফল ছাপিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি সেরে নেওয়াই হতে পারে এই সিরিজে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি। প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে, অধিনায়ক তামিম জোর দিয়েই বলেছেন, স্কোয়াডে ফেরা নাঈম ও আফিফকে ম্যাচ খেলার সুযোগ দিতে চান তারা।
সেটি দিতে পারলে বিশ্বকাপের আগে দলের বিকল্প সম্পর্কে একটা ধারণা পাবে দল। যা সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা সাজাতেও রাখবে বড় ভূমিকা। পাশাপাশি পেসারদের অদল-বদল করে খেলানোর ভাবনায়ও সাফল্য পেলে নিজেদের সেরা একাদশ সাজানোর সুরটাও এই সিরিজ থেকে বেধে নিতে পারবে তামিমের দল।


প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৩ | সময়: ৫:২১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ