বাঘায় শোকাবহ আগস্টের শেষদিনে দু’টি শোকসভা

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর শোকাবহ মাস আগস্টের শেষ দিন বিকেলে বাঘায় পৃথক দুটি শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে বাঘা উচ্চ বিদ্যালয়ম মাঠে একটি সভার আয়োজন করে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ। প্রক্ষান্তরে বাঘা শাহদৌলা সরকারী কলেজ মাঠে যুবলীগের ব্যানারে অপর একটি শোক সভা করেন আওয়ামী লীগের একাংশ ও আ’লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত তিন বিদ্রোহী নেতা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমুল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
বাঘা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত শোক সভায় মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনা সদস্য জাতির পিতা-সহ তার সপরিবারকে নির্মম ভাবে হত্যা করেন। এমাসে আওয়ামী লীগের ওপরে আরো একটি আঘাত এসেছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওই দিন রাজধানী ঢাকায় দলের একটি সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান সহ বহু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়। ফলে আগস্ট মাসটি আওয়ামী লীগের কাছে বিশেষ শোকের মাস। আর এই মাসের শেষদিন বাঘা উপজেলা মহিলা আ’লীগের বিপরীতে পৃথক শোক সভা ডেকেছেন চারঘাট-বাঘায় বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত তিন বিদ্রোহী নেতা। এটা আমরা আশা করিনি।
সরেজমিন লক্ষ করা গেছে, আগস্টের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শোক সভা করছেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন উপজেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা খাতুন লতা। এতে অতিথি ছিলেন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও জেলা মহিলা লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জয় জয়ন্তি মালতি সরকার সহ উপজেলার মহিলা আ’লীগের সকল ইউনিট ও জেলা মহিলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ।
প্রক্ষান্তরে বাঘা শাহদৌলা সরকারী কলেজ মাঠে যুবলীগের ব্যানারে দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোকাদ্দেস এর সভাপতিত্বে শোক সভা করেছেন আওয়ামী লীগের একাংশ ও আ’লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত তিন বিদ্রোহী নেতা।
এরা হলেন, চারঘাট উপজেলার বাসিন্দা ও সাবেক সাংসদ রায়হানুল হক রায়হান, বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলু ও বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে জাতির পিতাকে স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রায়হানুল হক রায়হান।
তিনি বলেন, আজকের শোক সভার উপস্থিতি প্রমান করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিপিড়িত-নির্যাতিত নেতাদের সাথে লোকজন আছে। এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী জেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ চাই। আমরা নানা বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আজ শোক সভা করছি। এই দিনটির কথা আমাদের মনে থাকবে।
বাঘা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে চলতি মাসের শেষদিন পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর আ’লীগের আয়োজনে জাতীয় শোকসভা করে আসছি। শেষদিন উপজেলা মহিলা আ’লীগ বাঘা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। হটাৎ লোকমুখ জানতে পারি আ’লীগের একাংশ ও মনোনয়ন বঞ্চিত তিন বিদ্রোহী যুবলীগের ব্যানারে বাঘা শাহদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে শোক সভার আয়োজন করছে।
এদিকে বাঘা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান নিপ্পন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের শোক সভায় তার বক্তব্যে বলেন, আমি বার-বার নিষেধ করা সত্বেও দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোকাদ্দেস পৃথক স্থানে মাইকিং করে শোক সভার আয়োজন করেছে। সেখানে জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ তিনিও উপস্থিত হননি।
বাঘা উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সদস্য মাসুদ রানা তিলু, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মুন্টু, সাবে সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ সাদিক কবির ও সাবেক প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টুসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, যে তিন নেতার আয়োজনে মাসের শেষদিনে শোক সভা অনুষ্ঠিত হলো তারা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী নেতা। এদের মধ্যে একজনকে আমরা দলের বৃহৎ সার্থে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করি।
তারা অভিযোগ তুলে বলেন, এই তিন নেতা ও তাদের লোকজন কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন কর্মসুচি পালনে উপস্থিত হন না। সম্প্রতি রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাইদ চাঁদ এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রকাশে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। আমরা বাঘা উপজেলা আ’লীগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করি। কিন্তু এই প্রোগ্রামে তারা কেউ উপস্থিত হননি। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা মনোনয়ন চাওয়া সহ দলের মধ্যে বড় ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, দল যেহেতু করি, সেহেতু দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার আধিকার আছে, চাইবো। অনুরুপ কথা বলেন চারঘাট উপজেলার বাসিন্দা ও সাবেক সাংসদ রায়হানুল হক রায়হান।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ | সময়: ৫:০০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ